শসা চাষ পদ্ধতি | শসা চাষ
শসা চাষ পদ্ধতি
শসা চাষ করবেন
ekrishi24: শসা চাষ এক প্রকারের লাভজনক ও অর্থকরী সবজি ও ফল দুটোই। স্বল্প সময়ের সবজি হওয়ায় আমাদের দেশে দিন দিন শসা চাষ পদ্ধতি বেড়েই চলেছে। জাতভেদে বীজ বপণের ৪৫-৬০ দিন পর থেকেই ফল তোলা যায় বিধায় ধানের তুলনায় শসা চাষে ২/৩ গুণ লাভ হয়। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় শসা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আবার অনেকে শসার চাষ সঠিক পদ্ধতিতে না করায় অনেক চাষি ফলন নিয়ে হতাশ হন। তাহলে আসুন জেনে নিই যে পদ্ধতিতে শসা চাষ করলে ফলনে শতভাগ সফলতা আসে।
![]() |
| শসা চাষ পদ্ধতি |How To Grow Cucumber |
শসার পুষ্টিগুনঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম শসাতে ৯৪.৯ গ্রাম জলীয় অংশ এবং ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে । তাছাড়া নানাবিধ পুষ্টি উপাদান যেমন, চর্বি-০.১ গ্রাম , খনিজ পদার্থ- ০.৪ গ্রাম, আঁশ- ০.৪ গ্রাম , খাদ্যশক্তি- ২২ কিলোক্যালরি, আমিষ- ১.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রন- ১.৫ মিলিগ্রাম , অল্প ক্যারোটিন,ভিটামিন বি-১০.১৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.০২ মিলিগ্রাম ও শর্করা - ৩.৫ গ্রাম ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে ।
মাটি ও জলবায়ুঃ
উর্বর দো-আঁশ মাটি ও অম্লক্ষারত্ব ৫-৫-৬.৮ শসা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ২৫-৩০ সেঃ গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভাল জন্মে থাকে।
জীবন কালঃ
সাধারণত শসা জাত ভেদে ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
বপনের সময়ঃ
জাতভেদে ফেব্রুয়ারী-মার্চ (মধ্য মাঘ-মধ্য ফাল্গুন) শসা চাষ পদ্ধতির উপযুক্ত সময়। এই বীজ বছরের যে কোন সময় বপন করা হয়। তবে অতীব শীতে এই বীজ বপন না করাই উত্তম।
বীজের হারঃ
জাত ভেদে শতক প্রতি ২-৪ গ্রাম। অথবা একর প্রতি ২০০-৩২৫ গ্রাম। এবং হেক্টর-প্রতি-৫০০-৮০০ গ্রাম। মাদার রোপন করলে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়। শসা চাষে বীজ একদিন ও একরাত ভিজিয়ে লাগানো ভালো।
জাত নির্বাচনঃ
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু জাতের শসার চাষ হচ্ছে এর মধ্যে বিদেশী জাতের অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি ২টি স্থানীয় জাত উৎপাদন করে থাকে বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামে। এছাড়াও বাংলাদেশী কয়েকটি বেসরকারী সবজি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অনেকগুলো বিশুদ্ধ জাত ও হাইব্রিড (সংকর জাত) শসার জাত বাজার জাত করেছে। স্থানীয়ভাবে গ্রীন কিং, শিলা, আলাভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, সানটং-৪, পান্ডা, ভেনাস, মাতসুরি, বাশখালী, মধুমতি, নওগা গ্রীন, লাকি-৭, ডেডি ২২৩১ এফ-১, তিতুমীর এফ-১, বারমাসী, ডেসটিনি, বুলবুল এফ-১ ইত্যাদি জাত চাষ করা হয়। তীব্র শীতব্যাতীত সারাবছর চাষ উপযোগী জাত।
জমি তৈরীঃ
দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে শসা চাষ ভালো হয়। মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া হয়। আগাছা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ক্ষেত সমতল করে নিতে হবে। এবং সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
মাদা তৈরীঃ
শসা চাষে ৫০-৮০ সে. মি. চওড়া ও গভীর-গর্ত তৈরী করতে হয়। ২-২.৫ মি: দূরে মাদা তৈরী করতে হয়।
চারার দূরত্বঃ
শসা চাষে সরাসরি বীজ বুনলে লাইন থেকে লাইন ৬০ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ৬০ ইঞ্চি দূরে লাগাতে হবে ।
সার-ব্যবস্থাপনাঃ
একর প্রতি গোবর ২.০ টন, খৈল ১১৩ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমপি ৪০ কেজি, ইউরিয়া ৪০ কেজি সার প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে সব সার গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে। বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের প্রথম অর্ধেক এবং প্রায় দেড় মাস পর ইউরিয়া সারের পরের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্হাপনাঃ
মাটিতে রস কম থাকলে বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যেই একটি সেচ দিতে হবে। সাধারণত ২ সপ্তাহ পর পর ২-৩ বার সেচ দিন। জমিতে রসের অভাব থাকলে সেচ দিতে হবে। পুরো জীবন কালে মাটিতে রসের মাত্রা ৫০% এর নিচে নেমে যাবার আগে ( পূর্ণ বয়সী শিকড় ৫০ সেমি) সেচ দিন ।
চারা উৎপাদনঃ
নার্সারী বা বীজ তলায় চার তৈরী করে জমিতে লাগানোই উত্তম। এক্ষেত্রে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে পচা গোবর বা কম্পোষ্ট ও মাটি একত্রে মিশিয়ে ৬৮ ইঞ্চি সাইজের পলিইথিন ব্যাগে ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে।
রোপণঃ
চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি চারা থাকলে মাঠে লাগানোর ৬-৭ দিন পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল চারাটি তুলে প্রতি মাদায় ১ টি করে চারা রাখলেই হবে।
রোপণের দূরত্ব: ১.৫ x ১.৫ মিঃ
বাউনি দেওয়াঃ
তারের নেট অথবা সুতলী অথবা বাশের কঞ্চির সাহায্যে বাউনি দিতে হবে। বাউনি/মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১টি দিলেই চলবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ
অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার জন্য নালা রাখতে হবে। এবং জমির থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
আগাছা ও চারা পাতলকরণঃ
নিড়ানি দিয়ে জমি পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া ৩-৪ সপ্তাহ পর, সব বীজ অঙ্কুরিত হ’লে, মাদা পিছু ৩টি গাছ রেখে, অন্য গাছগুলি তুলে ফেলতে হবে।
♦♦পোকাঃ
যে সকল পোকা বেশি শসার জমিতে আক্রমণ করে তাদের নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
• গান্ধীপোকা ও বিটল পোক (এপিল্যাকনা বিটল ও রেড পামকিন বিটল):
গান্ধী পোকা ও বিটল পোকা-গাছের পাতা খায় এবং ফুলের রস চুষে খেয়ে গাছ দুর্বল করে দেয়। এপিল্যাকনা বিটলের গায়ে কাটাযুক্ত হলদে রঙের গ্রাব খুব দ্রুত গাছের পাতা খায়।
• ফলের মাছি পোকাঃ
এই পোকা ফল ছিদ্র করে ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে ঐ ফলের মধ্যে জন্মায় এবং ফল পঁচে যায়।
♦♦ রোগঃ
যে সকল রোগ বেশি আক্রমণ করে তাদের নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
• পাউডারিমিলিডিউ রোগঃ
এই রোগে পাতার উপর সাদা পাউডার দেখা যায় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন হ্রাস পায়।
• আনথাকনোজ রোগঃ
এই রোগে আক্রান্ত হ’লে প্রথমে পাতায় হলদে দাগ হয়, পরে দাগগুলো বাদামী বা কালো হয়ে ঐ অংশ পচে যায়। ফলের বহিরাবরণেও এই বাদামী দাগ দেখা যায় ও ফল পচে যায়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ
কাঁচা খাওয়ার জন্য শসা পাকানো হয় না। তবে রান্না করে খেতে হ’লে কিছু পাকিয়ে নেওয়া ভাল। কাজেই সবুজ থাকতেই শসা তুলে ফেলা হয়। জমিতে লক্ষ্য রেখে মাঝে মাঝেই শসা তুলে নেওয়া হয়। একবার সংগ্রহ আরম্ভ হ’লে ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফল তুলতে হয়। শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত শসা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
সংরক্ষনঃ
ঝুড়িতে ভরে পাতলা চট দিয়ে ঢেকে কিনারা সেলাই করে শীতল জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখতে হবে।
সতর্কতা : ঔষধ ছিটানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কোন ফল বাজারে বিক্রি বা খাওয়া যাবে না।
যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.com অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে বা কৃষক বন্ধু সেবার ৩০৩১ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।
