আলু চাষে সার প্রয়োগ ও তার পরিচর্যা | আলু চাষ

আলু চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা


সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে আলু চাষের জমিতে সার প্রয়োগ এবং পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।আমাদের দেশে অনেক চাষিরা সার প্রয়োগের সঠিক নিয়ম না জেনে আলুর জমিতে সার প্রয়োগ করে থাকেন।যার ফলে আলুর ফলন তেমন একটা ভালো হয় না।

আর সেজন্য আমরা আলু চাষে সারের প্রয়োগমাত্রা ও পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব

আলু চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও পরিচর্যা,সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে আলু চাষের জমিতে সার প্রয়োগ এবং পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।আমাদের দেশে অনেক চাষিরা
আলু চাষে সার প্রয়োগ ও তার পরিচর্যা | আলু চাষ



আলুর সারের পরিমাণঃ

দেশের বিভিন্ন স্থানের মাটির উর্বরতা বিভিন্ন রকমের এজন্য সারের চাহিদা সকল জমির জন্য সমান নয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ফার্মগেট, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “সার সুপারিশ গাইড” অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করতে হবে।



আলুর সার প্রয়োগের কারলঃ

দুটি কারণে আলুতে সুষম সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। 

প্রথমত: সুষম সার প্রয়োগ করলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত বীজ আলুর গুণগত মান ভালো হয়। 

দ্বিতীয়ত: গাছে কোনো খাদ্য উপাদানের অভাব জনিত লক্ষণ সৃষ্টি হলে আলু গাছে ভাইরাস রোগের উপস্থিতি / লক্ষণ সনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

 

নিছে আলুর সার প্রয়োগের চার্ট দেওয়া হলঃ


সারের নাম সারের পরিমাণ
শতকে/কেজি বিঘায়/কেজি প্রতি হেক্টরে
গোবর ৪১ ১৩৭৮ ১০ টন
ইউরিয়া ১.৩২ - ১.৪২ ৪৪.৭৮ - ৪৮.২৩ ৩২৫ - ৩৫০ কেজি
টিএসপি ০.৮১ - ০.৮৯ ২৭.৫৬ - ৩০.৩২ ২০০ - ২২০ কেজি
এমপি ০.৮৯ - ১.০১ ৩০.৩২ - ৩৪.৪৫ ২২০ - ২৫০ কেজি
জিপসাম ০.৪০ - ০.৪৯ ১৩.৭৮ - ১৬.৫৪ ১০০ - ১২০ কেজি
জিংক সালফেট ০.০৩২ - ০.০৪০ ১.১০ - ১.৩৮ ৮ - ১০ কেজি
বোরন (প্রয়োজনবোধে) ০.০২৪ - ০.০৩২ ০.৮৩ - ১.১০ ৬ - ৮ কেজি


আলুর সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

গোবর ও জিংক সালফেট শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, সম্পূর্ণ টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরন সার রোপণের সময় সারির দুই পার্শ্বে বা জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।এবং প্রথমবার ইউরিয়া দেবার পর বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর সাথে সাথে সার ও বীজ মাটি দিয়ে ভেলি তুলে ঢেকে দিতে হবে।



আলু চাষের পরিচর্যাঃ


আলুর সেচ ব্যবস্থাপনাঃ  

এদেশে অনেক চাষী  বিশেষ করে যারা দেশী আলুর চাষ করেন তারা আলুর জমিতে সেচের পানি ব্যবহার করতে চান না৷ কিন্তু অধিক ফলনশীল আলুর জাতে অধিক সার ব্যবহার করলে আলুর জমিতে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহার করা আবশ্যক৷ আলুর জমিতে সেচ দেওয়া বেশ সুবিধাজনক৷ সারিতে গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে দেওয়ার ফলে যে জুলি বা নালার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে দিলেই সারা ক্ষেত পানিতে সিক্ত হয়ে যায়৷ আলুর জমি সব সময় রসযুক্ত থাকবে সেই বিবেচনায় আলু ক্ষেতে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে৷

 মাটির প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে ২/৩ বার সেচ দিলেই চলবে৷ অধিক সেচে কোনো লাভ নেই, তাতে বরং উপকারের চাইতে অপকারই হবে৷ এই অবস্থায় গাছে ছোট ছোট নিম্নমানের আলু ধরবে৷ আবার অনিয়মিত পানি ব্যবহার করলে গুটি যুক্ত ফাঁপা ধরনের আলু জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে৷ আলু উঠানোর দুই সপ্তাহ পূর্ব হতে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে৷ এতে আলুর পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে৷


আলুর সেচ প্রয়োগঃ-১

বীজ রোপণের পর জমিতে পরিমিত রস না থাকলে সেচ দেওয়া উত্তম, তবে খেয়াল রাখতে হবে ক্ষেতে কোনভাবেই পানি না দাঁড়ায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পানিতে নালা/ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত ডুবে যায়।

আলুর সেচ প্রয়োগঃ-২

স্টোলন বের হওয়ার সময় ২০-২৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ প্রয়োগ করতে হবে। 

উল্লেখ্য যে, দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলু রোপণের পর ৩০-৫০ দিনের সময়ে জমিতে কোন অবস্থায় রসের ঘাটতি এবং ৬০-৬৫ দিনের পর  রসের আধিক্য হতে দেয়া যাবে না।


আলুর সেচ প্রয়োগঃ-৩

৪০-৪৫ দিনের মধ্যে গুটি বের হওয়া পর্যন্ত এবং পরে আলু বৃদ্ধির সময় তৃতীয় বার সেচ দিতে হবে। জমি থেকে আলু উঠানোর ৭-১০ দিন পূর্বে মাটি ভেদে সেচ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।


আলুর আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ

বীজ বপনের ৬০ দিন পর্যন্ত আলুর ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হয়৷ আলুর জমিতে আগাছা দমন আলাদাভাবে করার প্রয়োজন পড়ে না৷ গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ও গোঁড়ার মাটি আলগা করে দেয়ার সময়ই আগাছা দমন হয়ে যায়৷




আলুর অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ

আলু গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়াঃ 
আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোড়ায় মাটি দেওয়া প্রয়োজন৷ জমিতে আলুর গাছ যখন ৫-৬ ইঞ্চি অর্থাৎ ১২-১৫ সেন্টিমিটার হয় তখন দুই সারির মাঝখানের মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে নরম ঝুরঝুরা করে নিতে হয়৷ এই সময় জমির আগাছা নিধনের কাজও হয়ে যায়৷ নরম ঝুরঝুরা মাটি কোদালি দ্বারা টেনে সারিতে গাছের দুই দিকে দেওয়া হয়৷ এর তিন সপ্তাহ পর গোড়ায় আবার মাটি দিতে হয়৷ গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে আর একবার অর্থাৎ তৃতীয়বারের মতো মাটি দেওয়া হয়৷ গাছের গোড়ায় এইভাবে মাটি দিলে গাছের স্টোলনগুলো টিউবার অর্থাৎ আলুতে পরিণত হবার সুযোগ পায়৷ মাটি ঠিকমতো দেওয়া না হলে বর্ধিষ্ণু আলু মাটির বাইরে এসে সবুজ রং ধারণ করে৷ এ রকম আলু খাবার অনুপোযোগী এবং কখনো কখনো তা বিষাক্তও হতে পারে৷


যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ- সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url