সরিষার তেলের উপকারিতা যা আপনি জানেন না

সরিষার তেলের উপকারিতা  যা আপনি জানেন না

ডেস্ক ekrishi24: সরিষা বীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল। এক সময় সরিষার তেলই ছিল আমাদের রান্নার প্রধান উপকরণ। কিন্তু বাজারে সয়াবিন তেলের আবির্ভাবের পর আমরা অনেকেই সরিষার তেলের উপকারিতার কথা ভুলে গেছি। এখনও সরিষা বা সরিষার তেল প্রতিটি বাড়ির রান্না ঘরেই রয়েছে যা  রান্নায়, ভর্তা বানাতে এমনকি মালিশের কাজেও ব্যবহৃত হয় থাকে। কারণ সরিষার তেলর মধ্যে রয়েছে ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। সরিষা দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। এর রঙ ঘন লালচে হলুদ এবং এর গন্ধ ঝাঁঝালো। খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেলের উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হল। 
সরিষার তেলের উপকারিতা
সরিষার তেলের উপকারিতা


সরিষার তেলের উপকারিতা

♥♥  ওজন কমাতে সরিষার তেল

রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) সমৃদ্ধ সরিষার তেল শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

♥♥  সরিষার তেল ব্যথা কমায়

সরিষার তেলে থাকা (Anti-inflammatory) উপাদান যা প্রদাহ বিরোধী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেমনঃ- হাঁটুর ব্যথা, অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা, আর্থ্রাইটিস (বাত) এবং রিউম্যাটিক এর ব্যথাও দূর করে।

♥♥  ক্যান্সার রোধ

সরিষার তেলে থাকা গ্লুকোসিনোলেট (Glucosinolate) নামক উপাদান মলাশয় ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে থাকে।

♥♥ ফুসফুস পরিষ্কার 

 সরিষার তেল ফুসফুস পরিষ্কার রাখে এছাড়াও
সরিষার তেল এক ধরণের ডিকঞ্জেস্টেন্ট বা শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কারক। এই তেলের সাথে রসুন মিশিয়ে বুকে ও পিঠে লাগালে কফজনিত সমস্যার সমাধান হয়।

♥♥  হৃদিপিন্ড সুস্থ

হৃদিপিন্ড সুস্থ রাখে সরিষার তেলে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ক’রে থাকে এবং  হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০% কমিয়ে আনতে পারে।

♥♥  এজমা রোগে সরিষার তেল

শরীরে এজমা এটাক (Asthma attack) হলে সরিষার তেল বুকে ঘষলে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। সবসময় এর ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

♥♥  ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেল

শীতের সময় সরিষার তেল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং শরীর গরম থাকে। এই তেলের ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাস বিরোধী গুণাগুণ ত্বক ও চুলকে উজ্জ্বল করে তুলে। এই তেল ব্যবহার করলে ত্বক কখনই কালো হয় না।

♥♥  স্মরণশক্তি বৃদ্ধি

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও চেতনার উন্নয়নে সরিষার তেল স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও চেতনার উন্নয়নে সহায়তা অনেক করে থাকে।

♥♥  মাসিকের ব্যথা

মেয়েদের মাসিকের ব্যথা এবং গ্যাস ও বদহজম জনিত পেটের ব্যথায় সরিষার তেল পেটে মালিশ করলে সুফল পাওয়া যায়।

♥♥  পোকামাকড় এবং মশা তাড়ানো

সরিষার তেল পোকামাকড় এবং মশা তাড়ানোর জন্য ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এর গন্ধে পোকামাকড় কাছে ঘেঁষে না।

♥♥ হজম প্রক্রিয়া

সরিষার তেল হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে।

♥♥  দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায়

সুস্থ দাঁত ও জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১/২ চা চামচ সরিষার তেল + ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া + ১/২ চা চামচ লবন মিশিয়ে দাঁত ও মাড়িতে হালকা করে দু’বেলা ঘষুন।

♥♥  বয়সের ছাপ দূর করে

যেহেতু সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই থাকে সেহেতু এই তেল ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারে। ভিটামিন ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে পারে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন সরিষার তেল। তবে এই তেল যেহেতু ঘন তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালো ভাবে ঘষে নিতে হবে যেনো অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত ধুলাবালি জমা হয়ে ত্বকের ভালোর চেয়ে খারাপই হতে পারে বেশি।

♥♥  ঠোঁটের যত্নে

সরিষার তেল শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে যেখানে লিপ বাম বা চ্যাপ স্টিক অকার্যকর। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার নাভির মধ্যে এক বা দুই ফোঁটা সরিষার তেল দিন। তাহলে আর কখনোই আপনার ঠোঁট শুকাবে না বা ফাটবে না।

♥♥  চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে যেমন সাহায্য করে থাকে, তেমনি অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন,ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়।

♥♥  ক্ষুধা বৃদ্ধি করে

ক্ষুধার উপর সুস্বাস্থ্য বহুলাংশে নির্ভর করে। পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল। যাদের ক্ষুধার সমস্যা আছে তারা রান্নায় সরিষায় তেল ব্যবহার করতেই পারেন।

♥♥  উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে

পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচন তন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে সরিষার তেল। খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্ম গ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।


নোটঃ বাজারে পাওয়া সব তেলের মধ্যে সরিষার তেল সব থেকে বেশী স্বাস্থ্যকর। তবে এটা হতে হবে খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল বা কোল্ড প্রেসড (cold pressed)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে নিষিদ্ধ হলেও সরিষার তেল অন্যান্য দেশ বিশেষ করে এশিয়ার সর্বত্র রান্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইদানিং অনেকেই সয়াবিন তেলের পরিবর্তে খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করা শুরু করেছেন।


যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.com অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে বা কৃষক বন্ধু সেবার ৩০৩১ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url