ব্রি ধান ৫৮ জাত পরিচিতি
বোরো মৌসুমের জাতগুলোতে কোন আলোক সংবেদনশীলতা নেই। এ মৌসুম শুরু হয় ঠাণ্ডা ও ছোট দিন দিয়ে, আর ফুল ফোটে গরমের শুরুতে এবং বড় দিনে। তাই আলোক সংবেদনশীল কোন জাত বোরো মৌসুমে আবাদ করা উচিত নয়। বোরো মৌসুমের যে সমস্ত জাতের জীবনকাল ১৫০ দিন বা তার চেয়ে কম সেগুলোর বীজ বপন করতে হবে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে এবং যে জাতগুলোর জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশী সেগুলো ১৫ কার্তিক থেকে বীজ বপন করা যাবে। এ সময় বীজ বপন করলে চারার উচ্চতা ভেদে ৩৫-৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বোরো ধানের রোপণ ১৫ মাঘের মধ্যে শেষ করা উচিত। এরপর রোপণ করলে জীবনকাল ও ফলন উভয়ই কমে যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় ১৫-৩০ কার্তিকের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
| অঞ্চল | অঞ্চল বিভিন্নতা | জাতের নাম |
|---|---|---|
| বরেন্দ্র অঞ্চল | বিআর২৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৬৩, হাইব্রিড ধান৩ ও ৫। ব্রাউশ হিসেবে ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৮ ও ব্রি ধান৫৮ | |
| বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল | ||
| অপেক্ষাকৃত নিন্ম অঞ্চল | বিআর১৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ ব্রি | |
| অপেক্ষাকৃত উঁচু ও বলে দোআঁশ অঞ্চলে ব্রাউশ হিসেবে | বিআর২৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৫৮ ও ব্রি ধান৬২ | |
| ঠান্ডা সহনশীল জাত | ব্রি ধান৩৬, ব্রি ধান৫৫ ও ব্রি ধান৬৯ | |
| বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চল | বিআর২৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৫ | |
| বৃহত্তর যশোর অঞ্চল | ||
| জলাবদ্ধ অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৫ | |
| অন্যান্য অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল | ||
| অলবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৫ | |
| মৃদু লবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬৭ ও বিনা ধান১০ | |
| মাঝারি মাত্রায় লবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান ৬৭, বিনা ধান ১০ |
|
| পিট বেসিকের আওতায় নিম্ন অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চল | ||
| লবনাক্ত জোয়ার-ভাটা কবলিত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৭৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| মৃদু লবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৬৭, বিনা ধান১০ | |
| মাঝারি মাত্রায় লবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান ৪৭,৬৭,
বিনা ধান ৮,১০
|
|
| বৃহত্তর ঢাকা | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৭৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| বৃহত্তর ফরিদপুর | ||
| জোয়ার-ভাটা কবলিত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| উঁচু অঞ্চল | বিআর ২৬,ব্রি ধান ২৮,৬৩ | |
| পিট বেসিকের আওতায় নিম্ন অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| বৃহত্তর চট্রগ্রাম পাহাড়ি ভ্যালি অঞ্চল | ||
| পাহাড়ি ভ্যালি অঞ্চল | ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬০,ব্রি ধান৬৯, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| অলবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৯, ব্রি ধান৭৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| লবণাক্ত অঞ্চল | ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬৭, বিনা ধান-৮ বিনা ধান-১০ | |
| বৃহত্তর ময়মনসিংহ | ||
| অপেক্ষাকৃত নিম্ন অঞ্চল(হাওর) | ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| অপেক্ষাকৃত মধ্যে উঁচু অঞ্চল | বিআর২৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৭৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| হাওর(বৃহত্তর সিলেট,নেত্রকোনা ও কিশোরগ) | ||
| হাওর অঞ্চলের বাহিরে( মধ্যে উঁচু জমিতে) | বিআর১৪, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
এ অঞ্চল অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির জন্য
|
ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০ এবং ব্রি ধান৫৮ |
|
| মাঝারি নিম্ন জমিতে | ব্রি ধান২৮, ব্রি হাইব্রিড ধান ৩ ও ৫ | |
| নিম্ন জমিতে | ব্রি ধান ২৮, | |
| বৃহত্তর রাজশাহী চলনবিল ও অন্যান্য অঞ্চল | বিআর১৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ | |
| কুমিল্লা | বিআর১৬, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৫৮, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ও ৫ |
বীজ বাছাইঃ
বপনের জন্য পুষ্ট ও সুস্থ বীজ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা। বিভিন্ন পদ্ধতিতে (হাত বা কুলা দিয়ে, ইউরিয়া মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে) বীজ বাছাই করা যায়। বীজ বাছাইয়ের একটি ভালো পদ্ধতি হলো-
দশ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মেশাতে হবে। এবার ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিতে হবে। পুষ্ট বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট, হালকা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মেশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়। বপনের আগে বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো। প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম ভিটাভেক্স- ২০০ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকানি রোগপ্রবণ এলাকায় আবশ্যিক ভাবে ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
আদর্শ বীজতলা তৈরীঃ
দোআঁশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার জন্য ভাল। বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি অনুর্বর হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পঁচা গোবর বা আর্বজনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেমি পানি দিয়ে দু তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা, খড় ইত্যাদি পঁচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। বীজতলা তৈরির ৩/৪ ঘন্টা পর বীজ বোনা উচিত। একটি আদর্শ বীজতলার চিত্র নিম্নে দেওয়া হলো।
বীজ বপনঃ
বোরো মৌসুমের যে সমস্ত জাতের জীবনকাল ১৫০ দিন বা তার চেয়ে কম সেগুলোর বীজ বপন করতে হবে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে এবং যে জাতগুলোর জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশী সেগুলো ১৫ কার্তিক থেকে বীজ বপন করা যাবে। এ সময় বীজ বপন করলে চারার উচ্চতা ভেদে ৩৫ - ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বোরো ধানের রোপণ ১৫ মাঘের মধ্যে শেষ করা উচিত। এরপর রোপণ করলে জীবনকাল ও ফলন উভয়ই কমে যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় ১৫-৩০ কার্তিকের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। চার ফসল ভিত্তিক ফসল ধারায় বোরো ধানের চারা মাঘ মাসের ১ম সপ্তাহের মধ্যে রোপন করতে হলে পৌষ মাসের ১ম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
বীজের হারঃ
প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা ১ একর জমির জন্য ১০-১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। অঙ্কুরিত বীজ বেডের উপর সমানভাবে বুনে দিতে হবে । বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে । তাই বপনের সময় থেকে ৪/৫ দিন পর্যন্ত পাহারা দিয়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নালা ভর্তি করে পানি রাখতে হবে।
অতিরিক্ত ঠান্ডায় বীজতলার যত্নঃ
শীতের রাতে সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলা অতিরিক্ত ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া বীজতলা দিনে খোলা এবং রাতে সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে চারার বৃদ্ধি ভাল হয়। ফলে এ পদ্ধতিতে জন্মানো চারা রোপন করা সহজ হয় । চারার গুনগত মান ভাল হওয়ায় ফলনও তুলনামূলক ভাবে ভালো হয়।
জমি তৈরিঃ
দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি সমৃদ্ধ মধ্যম নিচু জমি এ ধান চাষের উপযোগী। মাটির প্রকারভেদে ৩-৫ বার চাষ ও মই দিতে হয়। শেষ চাষ ও মই দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমি যথেষ্ট সমতল হয় । শেষ চাষের সময় অনুমোদিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের পরিমাণঃ
বোরো ধান চাষে বিভিন্ন সারের মাত্রা (কেজি)
| সারের নাম | হেক্টর প্রতি | একর প্রতি |
|---|---|---|
| ইউরিয়া | ১২০-১৬০ | ৫০-৬৫ |
| টিএসপি | ১০০-১২০ | ৪০-৫০ |
| এমওপি | ৬০-৭০ | ২৫-৩০ |
| জিপসাম | ৩০-৪০ | ১২-১৬ |
| জিঙ্ক সালফেট (দস্তা) | ৫-৮ | ২-৩ |
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
ইউরিয়া ১/৩ অংশ ও অন্য সব সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ২/৩ অংশ সমান তিনভাগে ভাগ করে চারা রোপনের ২১, ৩৫ ও ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও পরিচর্যাঃ
ধান গাছের উপযুক্ত বৃদ্ধি ও অধিক ফলন পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে সেচ দিতে হবে। চারা রোপণের পর থেকে ক্ষেতে ৩-৫ সে.মি. এবং গাছ বড় হবার সাথে সাথে পানির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। ক্ষেতে অধিক পানি জমে গেলে মাঝে মাঝে পানি বের করে দিয়ে জমি শুকিয়ে ফেলতে হবে। পরবর্তী সময়ে কোন কারণে বেশ কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে ২/১ বার সম্পূরক সেচ দিতে হবে। ধান গাছ থোড় হওয়ার সময় অবশ্যই জমিতে ৩-৫ সে.মি. পানি থাকা প্রয়োজন । তবে থোড় অবস্থা থেকে ধানের দানায় দুধ আসা অবস্থা পর্যন্ত জমিতে রস বা পানি রাখতে হবে।
বীজতলা থেকে চারা উঠানোঃ
চারা যত্ন সহকারে উঠানো দরকার যাতে চারা গাছের কান্ড ভেঙ্গে না যায়। চারা গাছের শিকড় বা পাতা ছিঁড়ে বা কান্ড মচকে গেলে চারা গাছের বিশেষ ক্ষতি হয়। তাই চারা উঠানোর পূর্বে বীজতলাতে বেশি করে পানি দিতে হবে যাতে বীজতলার মাটি ভিজে নরম হয়। চারা উঠানোর পর ওই চারার পাতা দিয়ে বান্ডিল বাঁধাও উচিৎ নয় । শুকনো খড় ভিজিয়ে নিয়ে বান্ডিল বাঁধতে হবে।
চারার বয়সঃ
৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সের চারা লাগানো উত্তম। নাবি জাতের ধানের ক্ষেত্রে ৪৫-৫০ দিনের বয়সের চারা লাগাতে হবে।
রোপন পদ্ধতিঃ
বোরো ধানের রোপণ ১৫ মাঘের মধ্যে শেষ করা উচিত। সারি হতে সারির দূরত্ব ৮ ইঞ্চি (২০ সে.মি.) এবং সারিতে গুছি হতে গুছির দূরত্ব ৬ ইঞ্চি (১৫ সে.মি.) বজায় রাখতে হবে। প্রতি গুছায় ২-৩ টি চারা রোপন করতে হবে। রোপনের সময় জমিতে সামান্য পরিমাণ পানি থাকলেই চলে।
গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারঃ
ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা শতকরা ২০-২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। ফলে ইউরিয়া সার কম লাগে। গুটি ইউরিয়া সার একবারই ব্যবহার করতে হয়। এ সার প্রয়োগের পূর্বশর্ত হলো সারিবদ্ধভাবে ধান রোপন করতে হবে। বোরো মৌসুমে ২.৭ গ্রাম ওজনের ১ টি গুটি চারা রোপনের ১০-১৫ দিন এবং আউশ ও আমন মৌসুমে ১.৮ গ্রাম ওজনের ১ টি গুটি ৭-১০ দিনের মধ্যে এক সারি পর পর প্রতি চার গোছার মাঝখানে ৩-৪ ইঞ্চি কাদার গভীরে পুঁতে দিতে হবে (নিম্নের চিত্র অনুযায়ী)। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে আউশ ও আমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৬৫ কেজি এবং বোরো মৌসুমে ৮০-১০০ কেজি ইউরিয়া সাশ্রয় হয়।
আগাছা দমনঃ
ধানের চারা রোপণের ১৫ দিন পর হাত দ্বারা ১ম বার আগাছা দমন করতে হয়। আগাছানাশক দ্বারা আগাছা পরিস্কার করা গেলেও তা মাটির জন্য ভাল পদ্ধতি নয়। হাত দিয়ে , নিড়ানি যন্ত্রের সাহায্যে, আগাছা নাশক ব্যবহার করে এবং জৈবিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করা যায়। হাত দিয়ে আগাছা দমন অপেক্ষাকৃত সহজ। রোপা ধানে কমপক্ষে দুবার আগাছা দমন করতে হয়। প্রথমবার ধান লাগানোর ১৫ দিন পর এবং পরের বার ৩০-৩৫ দিন পর ।
নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহারে ধানের দু সারির মাঝের আগাছা দমন হয়। কিন্তু দু গুছির ফাঁকে যে আগাছা থাকে তা হাত দিয়ে তুলতে হবে । আগাছা তুলে মাটির ভিতর পুঁতে দিলে তা পঁচে জৈব সারের কাজ করে। ব্রি উইডার নামের নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে ঘন্টায় ১০ শতাংশ জমির আগাছা দমন করা যায়। যন্ত্রটির আনুমানিক মূল্য ৪৫০ টাকা। এটি ব্যবহার করা সহজ ও ওজনে হালকা। ফলে নারী শ্রমিকরাও সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারেন ।
সার ব্যবহারঃ
গুটি ইউরিয়া সার একবারই ব্যবহার করতে হয়।
গুঁড়া ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সমান দুই ভাগে ভাগ করে চারা রোপণের ১৫-২০ দিনে প্রথম উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
আগাছা দমন ও উপরি ইউরিয়া সার প্রয়োগঃ (২)
ধানের চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর হাত দ্বারা ২য় বার আগাছা দমন করতে হয়। এ সময় ইউরিয়া সার দ্বিতীয় বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
উপরি ইউরিয়া সার প্রয়োগঃ (৩)
ধানের চারা রোপণের ৪৫ দিন পর (কাইচথোর আসার পূর্বে) ইউরিয়া সার ৩য় বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল কাটাঃ
কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে বীজ বপন করে পৌষ-মাঘ মাসে ধানের চারা রোপন করলে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান কাটার উপযুক্ত হয়। ধান কাটার সময় ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি উচ্চতায় ধান গাছ কাটতে হবে। ধান গাছের বাকি অংশ জমি চাষ দেয়ার সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
ধানের ভাল ফলন ও সঠিক গুনাগুন সম্পন্ন ধান পেতে হলে কতিপয় নির্দেশনা মেনে চলতে হবে-
১। সঠিক সময়ে ধান কর্তন করতে হবে।
২। সঠিক পদ্ধতিতে মাড়াই,ঝাড়াই ও শুকাতে হবে।
৩। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শীষ ভেঙ্গে যায়, শীষকাটা লেদাপোকা এবং পাখির আক্রমণ হতে পার। তাই মাঠে গিয়ে ধান পেকেছে কিনা তা দেখতে হবে। শীষের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিকমতো পেকেছে বলে বিবেচিত হবে। কাটার পর ধান মাঠে ফেলে না রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাড়াই করা উচিত।কাঁচা খোলার উপর ধান মাড়াই করার সময় চাটাই, চট বা পলিথিন বিছিয়ে দিন। এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের রং উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে। মাড়াই করা ধান অন্তত ৪-৫ দিন রোদে ভালভাবে শুকানোর পর ঝেড়ে গোলাজাত করতে হবে।
ফলনঃ ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.০-৬.৫ টন।
