পাকা আম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর আধুনিক উপায়

 পাকা আম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ


বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও, উৎপাদন, বাণিজ্য বিশেষ করে ভোক্তাদের চাহিদার ক্ষেত্রে কয়েক গুন এগিয়ে আছে ফলের রানী আম। আম নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এতোটা কৌতূহল যা অন্য ফল নিয়ে  দেখা যায় না।তাই  সঠিক উপায়ে আম সংরক্ষণ না করলে ভালো আম কেনা সত্ত্বেও নিমিষেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় আমগুলো। তাই চলুন আম সংরক্ষণের সঠিক উপায়গুলো জেনে নেইঃ    



জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও ফলের রানী আম উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বাণিজ্যে কয়েক গুন এগিয়ে।তাই সঠিক উপায়ে আম সংরক্ষণ না করলে ভালো আম কেনা সত্ত্বেও নিমিষেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় আমগুলো।
পাকা আম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ 


▶️আম সংগ্রহের পর প্রাথমিক কাজ 


১. আম কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব ব্যাগ থেকে বের করে ফেলতে হবে। হোম ডেলিভারী সার্ভিস বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম আসলে আম হাতে পাবার পরপরই যত দ্রুত সম্ভব বক্স/প্যাকেট থেকে বের করে ফেলতে হবে ।


২. সরাসরি মেঝেতে না রেখে পরিষ্কার খড়, চটের বস্তা বা পেপার বিছিয়ে তার উপরে আম রাখতে হবে ।

৩. আম রাখার সময় কোনোভাবেই যেন আমের কোনো অংশে আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমের কোন অংশে আঘাত লাগলে সেই অংশ কালো হয়ে পচন ধরে ফলে আঘাতপ্রাপ্ত অংশ খাবার উপযোগী থাকে না ।   


৪. ছায়া যুক্ত স্থানে যেখানে রোদ পরে না এমন স্থানে আম রাখতে হবে ।  


৫. ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আম সংরক্ষণ করতে হবে।  

৬. ভাল আম পাকার পরে হলুদ রঙ হবে, কখনো সাদা রঙ হবে না ।  

৭. আম পেকেছে কিনা তা জানতে হাতে নিয়ে টিপে দেখা ঠিক না, নাকে শুকে পরীক্ষা করতে হয়।  

৮. ভাল মিষ্টি আম কাচা অবস্থায় খুব বেশি টক থাকে। তাই আম পাকার সঠিক সময়ের আগে খেলে অবশ্যই টক লাগবে।  


৯. আমের বোঁটার কাছে আমের যে আঠা জমে থাকে তা না ধুয়ে খেলে মুখ চুলকাতে পারে, এমনকি চুলকানোর স্থানে ঘা এর মতো হতে পারে। তবে এটা জটিল কিছু না বরং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যায়।

     

১০. আম বহনের ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যবহার করা মোটেই ঠিক নয়।     

১১. আমের পরিমাণ বেশী হলে বাঁশের ঝুড়িতে আম বহন না করে শক্ত কাগজের কার্টুন, কাঠের বাক্স বা প্ল্যাস্টিকের ক্যারেট-এ বহন করা উচিৎ।    


🔰ফুড গ্রেড প্লাস্টিক বক্স : 

আম সংরক্ষণের জন্য যে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের বাটি ব্যবহার করা যাবে না। শুধু ফুড গ্রেড প্লাস্টিক বক্স ব্যবহার করবেন।


⏩পাকা আম সংরক্ষণ করতে চাইলেঃ 


✅১ নং পদ্ধতিঃ   

• পাকা আমের খোসা ছাড়িয়ে নিন ভালো করে। পছন্দমতো আকৃতিতে ছোট ছোট টুকরা করে জিপলক ব্যাগে রাখুন। একসঙ্গে বেশি না রেখে কয়েক টুকরা করে রাখুন একটি ব্যাগে। 

• ব্যাগ মুখবন্ধ করে বাটিতে ঢুকিয়ে বাটি ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। সারা বছরই ভালো থাকবে আম।


✅২ নং পদ্ধতিঃ   

• আস্ত আম সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রথমে খবরের কাগজে মুড়ে নিয়ে রাখুন। 

• এরপর সেগুলো একটি কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন। 

• ব্যাগটি অন্য একটি পলিথিন ব্যাগে রাখতে হবে। তারপর ব্যাগটি রেখে দিন ডিপ ফ্রিজে। অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে আম।

•  আম নরম হয়ে বা পচে গেছে কি না চেক করুন ১০ দিন পর পর ।

• প্রয়োজন মাফিক ও আমের তাৎক্ষণিক গুণাগুনের উপর বিবেচনা করে কাগজ বদলে দিন।


✅৩ নং পদ্ধতিঃ   

• আম ছোট ছোট  টুকরা করে ব্লেন্ড করে নিন। 

• বরফ জমানোর পাত্রে কিংবা আইসক্রিমের কাপে ছোট ছোট করে জমান আমের মিশ্রণ। 

• জমে যাওয়া বরফের টুকরো ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে ট্রে কিংবা বাটি থেকে উঠিয়ে জিপলক ব্যাগে ঢুকিয়ে নিন। 

• তারপর ব্যাগটি মুখবন্ধ বাটিতে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রেখে পুরো বছরই খেতে পারবেন আম। 


কাঁচা আম সংরক্ষণের উপায় -

                                           দেখুন


▶️আম প্রক্রিয়াজাতকরণ 

বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করেও আম সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- কাটা আমের টুকরা চিনির সিরায় সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া, আমের আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি, জুস, মোরব্বা, আমসত্ত, আমচুর ইত্যাদি আকষর্ণীয় স্বাদ, গন্ধযুক্ত খাদ্য তৈরি করা যায়।


✅প্রক্রিয়াজাত করে আম সংরক্ষণ করার প্রাথমিক ধাপঃ


১.আম ১ কেজি নিতে হবে এবং লবণ নিতে হবে ১৫০ গ্রাম। আম সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই টাটকা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আম বাছাই করতে হবে। 

২.আম বাছাই করার পরে আমের বোঁটা ফেলে আম ধূয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এখন আম গুলো ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। আম কাটার পরে আবার ধুয়ে একটি চালুনিতে রেখে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।


৩.পানি ঝরানোর পরে একটি মাটির হাঁড়ি বা কাচের বয়াম বা প্লাস্টিকের কোটা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

৪. এখন আম ও লবণ একসাথে মিশিয়ে মাটির হাঁড়ি, কাচের বা প্লাস্টিকের কৌটায় রেখে ঢেকে, রেখে দিতে হবে। এভাবে চার থেকে পাঁচ দিন রেখে দেওয়ার পরে দেখা যাবে পানি বের হয়েছে।


৫.পানি বের হলে উক্ত পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপরে আবার আম পাত্রে ভোরে উপরে ১ সেন্টিমিটার পুরু লবণের স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।


৬. ঢাকনা দিয়ে এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। কারণ বাতাস ঢুকলে ছত্রাক জন্মাবে। এভাবে আমরা লবণ দিয়ে সারা বছর কাঁচা আম সংরক্ষণ করতে পারি।


√√লবনে রাখা আম নরম হয়। এই আম দিয়ে খুব ভালো আচার তৈরি করা যায়। তবে আচার তৈরির আগে আম ফুটানো পানিতে ডুবিয়ে ৩ মিনিট নাড়াচাড়া করে গরম পানি ফেলে দিয়ে; আবার কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধোয়ার পরে; আমে লবণের আন্দাজ এমন থাকবে যেনো, আচার বানানোর সময় আমে আর লবণ দিতে হয় না।


যোগাযোগঃ


কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url