আলুর আগাম ধ্বসা (Early Blight of Potato ) রোগ দমন ও তার প্রতিকার | আলুর রোগ

আলুর আগাম ধ্বসা (Early Blight of Potato ) রোগ দমন ও তার প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা


বাংলাদেশের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় একটি সবজির নাম আলু।খাদ্য ও পুষ্টিমানে আলুর ভূমিকা অতুলনীয়।যদিও বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য আলু নয়, তবুও সবজি হিসেবে আলু জনপ্রিয়।তবে বিগত বছরে আলুর ব্যাপক ফলন ও ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে আলু চাষের বিস্তৃতি বিপুলভাবে ঘটেছে।আলু চাষের সময় অনেক ধরনের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।তাই উল্লেখযোগ্য কিছু রোগের মধ্যে আলুর আগাম ধ্বসা (Early Blight of Potato ) রোগ নিয়ে আজকের আলোচনা।
আলুর আগাম ধ্বসা(Early Blight of Potato) রোগ দমন ও তার প্রতিকার,এটি Alternaria solani নামক ছত্রাকের আক্রমণ।আলুর টিউবার,পাতা ও কান্ডে আক্রান্ত হয়ে থাকে
আলুর আগাম ধ্বসা (Early Blight of Potato ) রোগ দমন ও তার প্রতিকার | আলুর রোগ


আলুর আগাম ধ্বসা রোগের পরিচয়ঃ

Early Blight of Potato রোগ আলুর সবচেয়ে মারাত্মক এক ধরনের Alternaria solani নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়। আলুর টিউবার,পাতা ও কান্ডে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারী- এপ্রিল এই সময়ে এই রোগ বেশি দেখা যায়। 



আলুর আগাম ধ্বসা রোগের লক্ষণঃ

বয়স্ক গাছের পাতায় এই লক্ষণ প্রথমে দেখা যায়।
আক্রান্ত পাতার উপর দাগগুলো কালো বা বাদামি রঙের হয়ে থাকে।কিন্তু প্রথমে নিচের পাতায় ছোট বাদামী রঙের অল্প বসে যাওয়া কৌণিক দাগ পড়ে।এরপর বাদামী রঙের দাগের সাথে কাল দাগ মিশে পর্যায়ক্রমে চক্রাকার দাগ পড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।আক্রমন বেশি হলে অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে একটি বড় দাগের সৃষ্টি করে।দাগের চারিদিক হলুদ সবুজ বলয় দেখা যায়। যা দেখতে আনেকটা বৃত্তাকার অথবা ষাঁড়ের চোখের মত।অতপড় গাছ হলদে হয়,নুয়ে পড়ে,ও পাতা ঝরে পড়ে এবং অকালে গাছ মারা যেতে পারে।তাছাড়া এ রোগের ফলে আলুর আকৃতি ছোট হয়ে যায়।এ রোগ নিয়ন্ত্রন করতে না পাড়লে দূত সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।এবং উল্লেখযোগ্যভাবে ফলন কমে যায় ও দোকানে রাখা আলুও পচে যায়।


আগাম ধ্বসা রোগ আক্রমনের পরিবেশঃ

যখন আবহাওয়া ঠান্ডা ও আদ্র থাকে এবং গাছপালা খুব কাছাকাছি থাকে তখন এ রোগের আক্রমনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঠান্ডা এবং আদ্র আবহাওয়া এই রোগ ২-৩ দিনের মধ্যে সমগ্র ক্ষেতের গাছপালা মেরে ফেলতে পারে।এ রোগ পাতা আক্রান্ত করে এবং কন্দে ছড়িয়ে যায়।এবং আলুর বীজের মাধ্যমে বাহিত হয়।

আরও বিস্তারিত জানতে নিছে ক্লিক করুন 


আলুর রোগ হওয়ার পূর্বে করণীয়:


➡️ আগাম জাতের আলু চাষ অর্থাৎ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আলু রোপণ।পাশাপাশি জীবাণু প্রতিরোধী আগাম জাত চাষের মাধ্যমে এ রোগের মাত্রা অনেকটা কমানো সম্ভব।  


➡️ নিরোগ certified, grade আলুর বীজ লাগাতে হবে। বীজ শোধনের জন্য Carbendazim 50WP ১লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে ১ কেজি বীজে ব্যবহার করতে হবে।


➡️ আলুর মৌসুমে নিয়মিত মাঠ বা আলুর জমি পরিদর্শন করতে হবে। 


➡️ আলুর সারি হতে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতি সারিতে আলু হতে আলুর দূরত্ব আস্ত বীজ আলুর ক্ষেত্রে ২৫ সেন্টিমিটার আর কাটা আলুর ক্ষেত্রে ১৫ সেন্টিমিটার অনুসরণ করতে হবে।এতে বাতাস এবং সূর্য মাটিকে শুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

➡️ আলুর সারিতে ভালভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে।

➡️ সেচের পর আলু গাছের গোড়ার মাটি সরে গেলে তা মাটি দিয়ে পুনরায় ঢেকে দিতে হবে।

➡️ আক্রান্ত গাছ/ অংশ কেটে কাচি দিয়ে মাটিতে দূরে পুতে ফেলতে হবে।

➡️ নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধের জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। 



জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

⛱️ রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে পরিষ্কার বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

⛱️ সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বীজ বপন করা।

⛱️ বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগেই শুষ্ক আলু রোগমুক্ত এলাকা হতে বীজের জন্য সংগ্রহ কর।

⛱️ সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মত ও পরিমিত সেচ প্রয়োগ করা।

⛱️ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের বীজ ব্যবহার করা।এবং আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করা।


আলুর রোগ হওয়ার পর করণীয়:

পাশের মাঠে রোগ দেখা দিলে বা পাতায় ২/১টি দাগ দেখার সাথে সাথে ইপ্রোডিয়ন বা ম্যানকোজেব গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমনঃ রোভরাল বা ডাইথেন এম-৪৫/ইন্ডোফিল এম-৪৫/পেনকোজেব ৮০ডব্লিউপি 

অথবা ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল ( ৭২ ডব্লিউপি) রিডােমিল গােল্ড, নিউবেন, এমকোমিল, করমিল, ডিওমিল, গ্রীনল্যান্ড, লগন, ইভামিল, ইমিমিক্স, ম্যানকোসিল, নাজাহ মেটাসিল, মেটারিল, মেটামিলি স্পেশাল, জি-মেটালেক্স, পদ্মমিল | পপুলার, পলিম্যান, সাজিদ |

অথবা কপার হাইড্রক্সাইড (চ্যাম্পিয়ান উইন)
প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের উপর ও নিচের পাতায় ভালো করে দিতে হবে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


নোটঃগাছ ভেজা অবস্থায় জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে না করাই ভাল। আর যদি স্প্রে করতেই হয় তাহলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সাবানের গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে। 


সতর্কতাঃ

কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করার সময় সর্বদা বিশেষ রক্ষাকারি কাপড় পরিধান করতে হবে বা হাত মোজা, সানগ্লাস, মাস্ক ও এপ্রোন ব্যবহার করে  সবসময় বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করতে হবে।এবং লেবেলে বর্ণিত নির্দেশাবলী সঠিকভাবে মানতে হবে। যেমনঃ 
কীটনাশকের মাত্রা, ব্যবহারের সময়, এবং শস্য সংগ্রহের পূর্বে কীটনাশক প্রয়োগের মধ্যেবর্তী সময়।



 যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url