আলু চাষের জমি তৈরি/বীজ বপনের কৌশল |আলু চাষ
আলু চাষের জমি তৈরি/বীজ বপনের সঠিক কৌশল
আমন মৌসুমের ধান কাটা শুরু মানে,কৃষকের রবি শস্য নিয়ে নানা পরিকল্পনা করা শুরু
করেছেন।এরই মধ্যে শীতকালীন নানা শাক-সবজি,সরিষা ও আলু অন্যতম।অনেক কৃষকের জমিতে
অনেক রকমের আলুর চাষ হয়।আর আলুর যখন উঠানো হয় তখন তো পুরো বাড়ি আলুময় হয়।তাই আজ
কথা বলব আলু চাষের জমি তৈরি ও বীজ বপনের কৌশল নিয়ে।
|
|
| আলু চাষের জমি তৈরি/বীজ বপনের কৌশল |আলু চাষ পদ্ধতি |
আলু চাষের জমি তৈরি
বিজ্ঞানসম্মত আলু চাষে জমি তৈরি
বাংলাদেশের কৃষক আলু উৎপাদনের জন্য আলুর জমি তৈরিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে
থাকেন। কিন্তু এগুলো বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আলুর জমি তৈরি করে
চাষ করলে একদিকে যেমন কৃষক লাভবান হবে অন্যদিকে ফলনও বাড়বে।
আলু সকম্পর্কে আরও জানতে নিছে ক্লিক করুন
আলু চাষের জমি তৈরিতে মাটি নির্বাচন
আলু চাষের জন্য হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি সব চাইতে
বেশী উপযোগী৷কিন্তু এটেল-দোআঁশ মাটিতেও আলুর চাষ করা যায়,তবে এই রকম মাটিতে আলু
খুব একটা ভালো হয় না৷আলুর মাটি সুনিষ্কাশনযুক্ত,গভীর ও কিছুটা অম্লাত্মক হওয়া
চাই৷ PH ৫.৫-৬০ এর মধ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়, এতে আলুর জন্য ক্ষতিকর রোগ স্কেভিস হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে না৷
আলু চাষের জমি তৈরির জন্য উৎপাদন মৌসুমঃ
বাংলার কার্তিক মাস আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।বাংলাদেশে
সাধারণত নভেম্বর মাসের আগে আলু লাগানো যায় না, কারণ তার আগে জমি তৈরি সম্ভব হয়
না। নভেম্বরের পরে আলু লাগালে ফলন কমে যায়। এ জন্য উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক
(নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহ
(নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ)।
আলু চাষের জমি তৈরি পদ্ধতি
আশ্বিন মাস হতে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজে হাত দিতে হয়৷ জমির প্রকৃতি ভেদে
৫/৬ টি চাষ ও কয়েকটি মই দিয়ে ভালোভাবে ওলট-পালট করে নিতে হবে৷ আলুর জমি গভীরভাবে
চাষ করা উচিত৷অনেক এলাকার চাষীগণ কোদাল ও লাঙলের সাহায্যেই জমি গভীরভাবে চাষ করে
থাকেন৷ জমি শুধু গভীরভাবে চাষ করলেই হয় না, মাটি মোলায়েম ও ঝুরঝুরা করে প্রস্তুত
করা হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়৷ ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর বৃদ্ধি ব্যাহত
হয়৷
আলু চাষে বীজ বপন পদ্ধতির কৌশল
আলু বীজ বপনের প্রকারভেদ
আলু বীজ সাধারণত দুই সারি পদ্ধতিতে বপন করা যায়।যেমনঃ
🥔 প্রথম পদ্ধতি
প্রতি সারি বরাবর ৫-৭ সেন্টিমিটার মাটি সরিয়ে নিয়ে নালা প্রস্তুত করা হয়,
তারপর সেই নালাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বপন করে মাটি দ্বারা বীজ ঢেকে দেওয়া হয়৷
"তবে এই পদ্ধতিটি বিজ্ঞানসম্মত নয়।কারণ নালার মাটি চাপ খাওয়া থাকে বলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়৷ ফলে কন্দ অর্থাৎ আলুর আকার ছোট থেকে যায়৷"
🥔🥔 দ্বিতীয় পদ্ধতি
সারির মাটি না খুড়ে অর্থাৎ নালা না করে সারির দাগ বরাবর বীজ নির্দিষ্ট ব্যবধানে
বপন করার পর দুই সারির মধ্যবর্তী জায়গা হতে মাটি টেনে উঁচু করে বীজ ঢেকে দেওয়া
হয়৷
"এই পদ্ধতিটিই বিজ্ঞানসম্মত, কেননা এতে জমির রস অনেক দিন বজায় থাকে এবং সারির মাটি আলগা থাকে বলে আলুর কন্দ বৃদ্ধিতে কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না৷"
আলু চাষে বীজ বপন দূরত্ব:
রোপণের দূরত্ব ৬০ -২৫ সেন্টিমিটার (আস্ত আলু) এবং ৪৫-১৫ সেন্টিমিটার (কাটা আলু)৷
আলু চাষে বীজের আকার
২৫-৩৫ গ্রাম ওজনের বীজ রোপণ করা সবদিক থেকে ভালো।
আলু চাষের জমি তৈরিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
আলুর চাষের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সার ব্যবস্থাপনা।বিঘা প্রতি ৪-৫ টন
গোবর/জৈবসার, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট (প্রয়োজন
বোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে৷ বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ
দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে৷
যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক
পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ
কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ- সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।