আলুর কাটুই পোকা (Cut worm) | আলুর পোকা

আলুর কাটুই পোকা (Cut worm)পরিচিতি 


পোকা চেনার উপায়ঃ

ছোট আকারের মথ, হালকা বাদামি। এরা নিশাচর অর্থাৎ রাতে এদের বেশি দেখা যায়। কীড়ার রং বেগুনী থেকে বাদামি বেগুনী। এই পোকা মাটিতে থাকে। কাটুই পোকা বেশ শক্তিশালী, ৪০-৫০ মিলিমিটার লম্বা। পোকার উপর পিঠ কালচে বাদামী বর্ণের, পার্শ্বদেশ কালো রেখাযুক্ত এবং বর্ণ ধূসর সবুজ। শরীর নরম ও তৈলাক্ত। 



আলুর কাটুই পোকা (Potato Cut worm) প্রথমে  চারা গাছ কাটে।এরপড় আলু ছিদ্র করে,দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে রাতে চারার গোড়া কাটে বলে এদের  নিশাচর বলে।
আলুর কাটুই পোকা (Cut worm) | আলুর পোকা


ক্ষতির ধরণঃ

মাটিতে বসবাসকারী কাটুই পোকা প্রথমে আলুর চারা গাছ কাটে। পরবর্তীকালে আলু ছিদ্র করে মারাত্মক ক্ষতি করে।পোকা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে,আর

রাতে চারার গোড়া কেটে ফেলে এ জন্য এদের  নিশাচর বলে। চারা ঢলে পড়ে অথবা শুকিয়ে মারা যেতে পারে। 

ডিম ফুটে বের হয়ে কীড়া পাতার বাইরের ত্বক অংশ খেয়ে থাকে। 

আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।

 


 অনুকূল পরিবেশঃ

আলু গাছ লাগানোর ২০-২৫ দিন বয়সে চারা অবস্থাতেই কাটুই পোকা আক্রমণ করে। 

দিনের বেলায় এই পোকা মাটির নীচে বা আবর্জনার ভিতরে লুকিয়ে থাকে এবং রাতে চারাগাছের কাণ্ড কেটে দেয় ও পাতা খেয়ে ফেলে। 

এছাড়া বীজ রোপণের ৪০-৫০ দিন পরে আলু গজানোর পরও কাটুই পোকা আলুর ক্ষতি করতে পারে। 

এমনকি আলু তোলার আগ পর্যন্ত এই পোকার আক্রমণ হতে পারে। 


জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

সকাল বেলা আক্রান্ত  বা কেটে ফেলা চারার আশে পাশে মাটি খুরে পোকা বের করে মেরে ফেলা।

আলু ক্ষেতে পাখি আসাকে উৎসাহিত করার জন্য ক্ষেতের মাঝে বাঁশের কাঠি বা গাছের ডাল পুতে দিতে হবে। বিশেষত: সেচের পরে কাটুই পোকার কীড়াগুলি মাটির উপরে উঠে আসে। এ অবস্থায় পাখি সহজেই পোকার কীড়াগুলিকে ধরে খেতে পারে।


রাতের বেলায় ক্ষেতের মাঝে মাঝে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে তার নিচে কীড়া এসে জমা হবে, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলা। 

কেরোসিন (২-৩ লি./ হেক্টর হারে) মিশ্রিত পানি সেচ দেয়া।

ক্ষেতের মাটি আলগা করে দিয়ে পোকা কেঁখো পাখিদের খাবার সুযোগ করে দেওয়া।

এ পোকা নিশাচর, রাতের বেলায় সক্রিয় থাকে তাই রাতে-রাতে টর্চ দিয়ে খুজে খুজে পোকা মেরে ফেলা। 

আলু ক্ষেতে সেচ দেওয়ার সময় পানির সাথে ২০ মি.লি/শতক হারে কেরোসিন তেল মিশিয়ে দিয়ে মাটিতে লুকিয়ে থাকা কাটুই পোকা মেরে ফেলা যায়।


রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

বিষটোপ হিসেবে হেক্টর প্রতি ২ কেজি কার্বোরাইল (সেভিন ৮৫ এসপি) অথবা কারটাপ (সানটাপ ৫০ এসপি), ১০০ কেজি গম বা ধানের কুঁড়া এবং ১৫ কিঃ গ্রাঃ ঝোলা গুড়ের সাথে পরিমাণমত পানি মিশিয়ে এমন একটি বিষটোপ তৈরী করতে হবে যা হাত দিয়ে ছিটানো যায়। এ বিষটোপ সন্ধ্যাবেলা আক্রান্ত ক্ষেতে চারাগাছের গোড়ায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে কাটুই পোকার কীড়া দমন সহজ হয়। 


ফেরোমন ট্রাপ এর সাথে ফুরাডান (কার্বোফুরান) ৫জি ০৮কেজি/একর বা অপটিমাস (ক্লোথিয়ানিডিন) ৫জি ১৬কেজি/ একরে জমি তৈরির সময় এবং শেষের সেচ প্রদানের পূর্বে বা আলু বীজ রোপণের সময় সারিতে নালার মধ্যে বা সমস্ত জমিতে ছিটিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। লক্ষ্য রাখবেন দানা ভেজার জন্য মাটিতে যেন রস থাকে।


ক্লোরপাইরিফস গ্রুপের কীটনাশক যেমন ডারসবান ০৫ মিলি./লি হারে অথবা (ক্লোরপাইরিফস+ সাইপারমেথ্রিন) গ্রুপের কীটনাশক যেমন: সুপারফাস্ট ৫৫ ইসি বা নাইট্রো বা বাইপোলার ৫০ ইসি বা হাইড্রো বা  সেতারা ৫৫ ইসি ০২ মি.লি./লি. হারে অথবা 

ল্যাম্ডা সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমনঃ পদ্মা ল্যামডা ৫ইসি বা ক্যারাটে/ ফাইটার বা রিভা ২.৫ ইসি ১-১.৫ মি.লি. /  (৩ মূখ )লি. হারে পানিতে মিশিয়ে  প্রতি ৫ শতকে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার পর গাছের গোড়ায় স্প্রে করে মাটি ভিজিয়ে নিন।


আক্রমণ বেশি হলে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ( কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি / ৪ মূখ ) 

[আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর সেপ্র করতে হবে।]

এরপর ফুরাডান ৫জি জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। পাইক্লোরেক্স ২০ ইসি (ক্লোরপাইরিফস) ৩.৫ এমএল/লি. পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।



যোগাযোগ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও

ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক

পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url