ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি | Ladies Finger Cultivar | ঢেঁড়স
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি | Ladies Finger Cultivation
ডেস্ক ekrishi24: ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সবজি ফসল হলেও এর অনেক
উপকারীতা ও গুনাগুন রয়েছে। তাছাড়া হজমশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে। এবং
অর্থনৈতিক ভাবে কৃষক সফল হতে পারে। এজন্যই ভালো ফলন পেতে
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি | Ladies Finger Cultivation সম্পর্কে
বিস্তারিত জানা দরকার। নিছে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
|
| ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি | Ladies Finger Cultivation |
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নামঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় সবজি যাকে ইংরেজিতে Ladies Finger বলে। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus, অথবা Hibiscus esculentus L. ভেন্ডি বা ঢেঁড়স শীতকালীন সবজি হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে সারা বছর ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ করা হয়ে থাকে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স পুষ্টিগুনঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স একটি জনপ্রিয় সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং পর্যাপ্ত আয়োডিন ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে পুষ্টিগুন রয়েছে ৯০.১৭ গ্রাম জলীয় অংশ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.৭ গ্রাম আঁশ, ৩৩ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি, ২.০ গ্রাম আমিষ, .১৯ গ্রাম চর্বি, ৭.৪৫ গ্রাম শর্করা, ৮২ মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ০.৬২ মিগ্রা লৌহ, ৩১.৩ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন কে, ৮২ মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ২৯৯ মিগ্রা পটাশিয়াম এবং ২৩ মিগ্রা ভিটামিন-সি রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফলে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ করলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক উপকারিতাও রয়েছে। নিম্নে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষের পদ্ধতি উল্লেখ করা হ’ল-ভেন্ডি বা ঢেঁড়স জাত পরিচিতিঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বারি ১ জাত টিতে ভাল ফলন হয়, এটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এই জাতের নেই কোন হলুদ শিরা বা ভাইরাস রোগ। এই জাতটি অনেক দিন পর্যন্ত ফল দেয়। বাড়ি ১ জাতটির বীজ বপনের ৪৫ দিন বয়সের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফোটার ৫-৬ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০ টি ফল হয়ে থাকে।বাড়ি ২ জাত এটিও উচ্চ ফলনশীল আগাম জাত। বীজ বপনের ৪০-৪২ দিন বয়সের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফোটার ৫-৬ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি গাছে ৩২-৩৮ টি ফল হয়ে থাকে।
উপরোক্ত দুটি জাত ছাড়াও পুশা,জাপানী, শ্রাবণী, শাউনি, সাওয়ানী,পারবনি কানি,পেন্টা
গ্রীন, কাবুলি ডোয়ার্ফ,প্যাসিফিক গ্রীন সহ ইত্যাদি জাতের চাষ করা হচ্ছে।
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স মাটি ও জলবায়ুঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সব মাটিতে চাষাবাদ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ঢেঁড়স ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। যদি পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকে তাহলে এঁটেল মাটিতে ঢেঁড়স বা ভেন্ডি চাষ করা যায়। প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করলে বেলে মাটিতেও ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ করা সম্ভব। ভেন্ডি বা ঢেঁড়স শুস্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ বপনের সময়ঃ
ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাসে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ বপনের সঠিক সময়।খরিপ ১ মৌসুম: জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষাবাদ করা যায়।
খরিপ ২ মৌসুম: মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষাবাদ করা যায়।
রবি মৌসুম: আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষাবাদ করা যায়।
এছাড়াও এখন অনেক ভাল বীজ কোম্পানি আছে যাদের ভেন্ডি বা ঢেঁড়স হাইব্রিড
জাতের বীজ বিক্রি করে। এই হাইব্রিড জাতের বীজ ১২ মাস চাষাবাদ করা যায়।
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স জমি তৈরিঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ করার জন্য জমিতে গভীরভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ঢেলা থাকলে ভেঙ্গে জমির আগাছা পরিস্কার করে নিতে হবে। জমি রেডি করে ১ মিটার করে বেড করতে হবে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজের পরিমাণঃ
শতক প্রতি ৩০/৩৫ গ্রাম বীজ এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ প্রয়োজন হয়।ঢেঁড়স বা ভেন্ডির বীজ বপনঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হবে। সারি করে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ বপণ করা হয়। জমি রেডি করে ১ মিটার করে বেড করতে হবে। এবং এবং দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেঃ মিঃ চওড়া নালা হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৪০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। ভেন্ডি বা ঢেঁড়স জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সার প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে হলে নীচের সারণী অনুযায় সার প্রয়োগ করতে হবে। ( শতক প্রতি সার
প্রয়োগ )
সার প্রয়োগ :
প্রতি শতকে গোবর ৭৫ কেজি, সরিষার খৈল ১.৭৫ কেজি, ইউরিয়া ২৩০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০
গ্রাম, এমওপি ২৩০ গ্রাম। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকী সব সার মাটির
সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়স
বীজ বপণ করতে হয়। ইউরিয়া সার সমান দু’কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর
৪০-৫০ দিন পর।
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স আগাছা দমনঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় বা চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমনের জন্য নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। পানি সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে কোঁদাল দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। এত মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেক দিন রস ধরে রাখতে পারে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সেচঃ
আগাম মৌসুমে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ করলে পানি সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। মাটির প্রকারভেদ অনুসারে ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া প্রয়োজন হয়। তবে প্রতি কিস্তিতে সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ
অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি
সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্যই বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেমি.
উঁচু করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স জমিতে যেসমস্ত পোকামাকড় ও রোগবালাই এর আক্রমণ বেশি হয় নিম্নে তার আলোচনা করা হল।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স পোকামাকড়ঃ
ফ্লি বিটল পোকা,ঢেঁড়শের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা,শোষক পোকা/ হোপার/ শ্যামা পোকা,লেদা পোকা,ঢেঁড়শের জাব পোকা,ঢেঁড়শের পাতা মোড়ানো পোকা।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স রোগবালাইঃ
ঢেঁড়শের পাতার দাগ রোগ,ঢেড়ঁশের আগাম ধ্বসা রোগ,পাউডারি মিলডিউ রোগ,গোড়া পচা রোগ,শুটি মোল্ড,ডাঊনি মিলডিউ রোগ,মোজাইক ভাইরাস রোগ।সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। এবং বালাইনাশক/কীটনাশক/ ছত্রাকনাশক কেনার সময় মেয়াদ দেখেননি।
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সবজির জন্য ফসল সংগ্রহঃ
চারা গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর ভেন্ডি বা ঢেঁড়স গাছ ফুল দিতে শুরু করে। ফুল বের হওয়ার ৩ দিন (গ্রীষ্মকাল) এবং ৫ দিন (শীতকাল) পর ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ৬-১০ সে.মি. লম্বা হয়। এ সময় ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ফল নরম থাকে এবং আঙ্গুল দ্বারা সহজেই ভাঙ্গা যায়। সবজি হিসেবে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে ধারালো ছুরির সাহায্যে গাছ থেকে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স কাটা উচিত।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স বীজের জন্য ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বুনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স বা ভেন্ডি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ফলন :
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সবজি হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় প্রতি হেক্টর ৮-১০ টন (বারি ঢেঁড়স-১ এ ১৪-১৬ টন) এবং বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি হয়ে থাকে।ভেন্ডি বা ঢেঁড়স সংরক্ষনঃ
ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ছায়ায় সংরক্ষণ করুন। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিন। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখতে পারেন।যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক
পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.com অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী
কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে
বা কৃষক বন্ধু সেবার ৩০৩১ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে
পারেন। সবজি ফসল হলেও এর অনেক উপকারীতা ও গুনাগুন রয়েছে। তাছাড়া হজমশক্তি
বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে। এবং অর্থনৈতিক ভাবে কৃষক সফল হতে পারে। এজন্যই ভালো
ফলন পেতে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি | Ladies Finger Cultivation
সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। নিছে ভেন্ডি বা ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা
হল।
