পানি কচু চাষ পদ্ধতি
পানি কচু চাষের পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হল:
পানি কচুর চাষ পদ্ধতিঃ-
পানি কচু এমন একটি সবজি যার কচি পাতা, ডগা ও মূল কচু সবই খাওয়া যায়। পানি কচুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। উৎপাদনের দিক দিয়ে মুখীকচুর পরই পানি কচুর স্থান।পানি কচু অনেক দেশে প্রধান খাদ্য।আমাদের দেশে সব জেলায় পানি কচুর চাষ করা যায়।
জলবায়ু ও মাটিঃ-
আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুতে পানিকচু ভালো হয়। পানি কচু চাষের জন্য জমি হতে হবে মাঝারি নিচু যেখানে বৃষ্টির পানি জমে। পানি কচু অল্প আলো বা ছায়াতেও ভাল জন্মাতে পারে। প্রখর রোদে ভাল ফলন হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে পানি কচু চাষ করা যায তবে পলি দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পানি কচু চাষে উত্তম।
পানি কচুর জাতঃ-
আমদের দেশে বেশ কযেক প্রকার কচুর জাত রয়েছে। যেমন- লতিরাজ (উফশী) ও জয়পুরহাটের স্থানীয় জাত পানি কচুর জন্য উত্তম জাত।
এছাড়াও বারি পানি কচু ১ ও বারি পানি কচু ২ এ দেশে উদ্ভাবিত পানিকচুর দুটি উন্নত জাত।
রোপনে সময়ঃ-
কচুর চাষ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে করা হচ্ছে। তাই অধিক লাভের জন্য আগাম চাষ করলে ভাল হয়। আগাম ফসলের জন্য কার্তিক মাস এবং নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন হতে মধ্য বৈশাখ মাস উপযুক্ত সময়।
চারা রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব কমপক্ষে ৬০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব কমপেক্ষ হবে ৪৫ সেমি. হতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে পানিকচুর চারা রোপণ করা হয়।
কচু রোপণের নিয়মঃ-
একটা পূর্ণ বয়স্ক কচুর গোড়া থেকে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চারা উৎপন্ন হয়। এ সকল চারার মধ্যে সতেজ চারা পানি কচু চাষের জন্য ‘বীজ চারা´ হিসাবে তুলে লাগাতে হবে। চারা কম বয়সের হতে হবে। পানি কচু রোপণের জমির মাটি থকথকে কাদাময় করার পর নির্ধারিত দূরত্বে ৫-৬ সেমি. গভীরে চারা রোপণ করতে হবে। পানি কচুর চারা সাধারণত আগের বছরের পুরনো চারা লাগানো হয়। পুরনো চারা স্যাঁতসেঁতে কোনো জায়গায় আঁটি করে রাখা হয়। পরের মৌসুমে তা তুলে জমিতে লাগানো হয়।
সার প্রয়োগঃ-
জৈব সার দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। তাহলে জমির উর্বর ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ফসল ভাল হবে। এছাড়াও জমিতে টিএসপি, এমওপি সার চারা রোপণের সময় জমিতে দিতে পারেন। ১ম কিস্তি রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যেই ইউরিয়া সার দিতে হবে। পানি কচু চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ৫ টন গোবর, ১০০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি ও ১২৫ কেজি এমওপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে একবারে দিতে হবে। গোবর সার দেয়া সম্ভব না হলে অন্যান্য সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ-
চারা লাগানোর সময় জমিতে বদ্ধ পানি না থাকলে প্লাবন সেচ দিয়ে জমি কাদা করতে হবে। জমি শুকিয়ে গেলে পানি কচু গাছের ক্ষতি হয়। তাই বৃষ্টি না হলে জমিতে প্রবাহমান পানি না থাকলে সেচ দিতে হবে।
পরিচর্যাঃ-
পানি কচুর জমিতে পানি কচুর গোড়ায় সব সময় পানি থাকতে হবে এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করতে হবে। কাণ্ডের গোড়ায় যে সকল চারা হবে সেগুলি তুলে ফেলতে হবে। চারা হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাটির নিচের অংশ থেকে যে সব চারা আসবে তা থেকে ২/৩টি চারা রেখে বাকি চারা কেটে দিতে হবে।
রোগ-বালাই দমনঃ-
পানি কচুতে বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। এসব রোগ দমনেরও বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। যেমন- ছোট ও কালচে লেদাপোকা কচুর পাতা খেয়ে ফেলে। এসব পোকা মারতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। কচুর পাতায় মড়ক রোগ হলে পাতার উপর বেগুনী বা বাদামী রঙের গোলাকার দাগ পড়ে। পরে তা কচু ও কন্দে আক্রমণ করে।
এসব রোগ হতে পানি কচুকে মুক্ত করার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিন বা ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে দুই সপ্তাহ পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
পাতা খেকো লেদা পোকা ও শামুক পোকা পানি কচু গাছের ক্ষতি করে। এগুলো হাতে সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। খরার সময় লাল মাকড়ের আক্রমণ হতে
পারে।
রোগের মধ্যে ফাইটোফথোরা পাতা পোড়া রোগ অন্যতম। এ রোগ হলে পাতার নিচে প্রথমে জলবসা গোল গোল দাগ পড়ে। পরে দাগগুলো শুকিয়ে বাদামি হয় ও ওপরে উঠে আসে। শেষে পুরো পাতাই শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
অথবা আক্রমণের শুরুতে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব গ্রুপের যে-কোন ছত্রাকনাশক গুলে আক্রান্ত ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।
কচু সংগ্রহঃ-
কচুর চারা রোপণের দেড়-আড়াই মাসের মধ্যেই কচুর লতি তোলা যায়। ১৫-২০ দিন পরপর লতি তুলতে হবে। চারা রোপণের চার-ছয় মাসের মধ্যে পানি কচু সংগ্রহ করা যায়।
