সূর্যমুখী চাষাবাদ

সূর্যমুখী চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা



  • সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফু) হয়ে থাকে, ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ।

শ্রেণীবিভাগঃ-
জগৎঃplantae বিভাগঃangiosperms
শ্রেণীঃeudicots বর্গঃ asterales
পরিবারঃasteraceae উপপরিবারঃ heliantholdes
গোত্রঃ heliantheae গণঃhelianthus
প্রজাতিঃ h.annuus 

পুষ্টিমূল্য ও ভেষজগুণঃ সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড রয়েছে, তাছাড়া এতেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী।

ব্যবহারঃ 
  • সূর্যমুখীর বীজ পশুখাদ্য হিসেবে হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো হয়।
  • এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয় ৷ তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়।
  • ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে 
  •  তেল ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত।
  • সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।
  • ভিটামিন-ই এর উত্তম উৎস হলো এই সুর্যমুখী ফুলের বীজ।
  • ভিটামিন-ই এর অনেক উপকারী দিক রয়েছে। ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রী র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভূমিকাই কাজ করে।  ভিটামিন ‘ই’এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সাথে প্রদাহ নিবারণ ক্ষমতা এ দুটো গুণ রক্তনালীর সংকীর্ণ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ সূর্যমুখী সাধারণত সব মাটিতেই জন্মে। তবে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে বেশী উপযোগী।


বীজ শোধনঃ

মাটি ও বীজ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য বীজ শোধন একান্ত প্রয়োজন। বীজ শোধনের ফলে প্রধানত বীজ বাহিত রোগ দমন হয়। ফলে জমিতে আশানুরুপ গাছের সংখ্যা পাওয়া যায় এবং ফলন ভাল হয়। ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাক নিবারক দ্বারা বীজ শোধন করা হয়। প্রতি কেজি সূর্যমূখী বীজের জন্য মাত্র ৩ (তিন) গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ প্রয়োজন। একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত পাত্রে সূর্যমূখীর বীজ নিয়ে পরিমাণমত ঔষধ মিশিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে ভালভাবে ঝাকিয়ে ১ দিন রেখে দেবার পর বীজ জমিতে বপন করতে হবে।

বীজ বপনের সময়ঃ
সূর্যমূখী সারা বছর চাষ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করা উচিৎ। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।

বপন পদ্ধতি ও বীজের হারঃ
সূর্যমূখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি. রাখতে হয়। এভাবে বীজ বপন করলে হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বারি সূর্যমূখী-২ এর জন্য হেক্টর প্রতি ১২-১৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরিঃ
সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ হওয়া প্রয়োজন । জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।
সার প্রয়োগঃ
সূর্যমুখী চাষে প্রতি হেক্টর জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া যায় ।
সারের নাম  সারের পরিমাণ
ইউরিয়া ১৮০-২০০ কেজি
টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি
এমপি ১২০-১৫০কেজি
জিপসাম ১২০-১৭০ কেজি
জিংক সালফেট ৮-১০ কেজি
বরিক এসিড * ১০-১২ কেজি
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট * ৮০-১০০ কেজি

* রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগা ও  রাজশাহী এলাকার জন্য প্রযোজ্য।
– এলাকা, জাত ও মৃত্তিকাভেদে সারের মাত্রায় তারতম্য হতে পারে।
প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
অর্ধেক ইউরিয়া ও সমুদয় অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট অর্ধেক ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে প্রথমভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর ফুল ফোটার পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন ও নিড়ানিঃ (২):
চারা গজানোর ৪৫-৫০ দিন পর দ্বিতীয় বার নিড়ানি দিতে ও আগাছা দমন করতে হবে ।
বীজ সংরক্ষণ বা গুদামজাতকরণঃ
সূর্যমূখী বীজ পরের মৌসুমে লাগানোর জন্য গুদামজাত করা প্রয়োজন হয়। বীজ সংরক্ষণের পূর্বে টিন বা টিনের ড্রামে বীজ সংরক্ষণ করা উত্তম। ভেতরে পলিথিন দিয়ে চটের বস্তায় ভালভাবে শুকানো বীজ প্রতি ৩০ কেজির জন্য ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডসহ সংরক্ষণ করলে ৭-৮ মাস পরেও বীজের শতকরা ৮০ ভাগ অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে। বর্ষাকালে এক থেকে দু’বার বীজ পুনরায় রোদে শুকিয়ে নেয়া ভাল।

ফসল সংগ্রহঃ
সূর্যমূখী বপনের ৬৫-৭০ দিন পরে ফুলের বীজ পুষ্ট হওয়া শুরু হয়। সূর্যমূখী কাটার সময় হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পুষ্কস্তবক (মাথা) সহ গাছগুলো নুয়ে পড়ে। বীজগুলো কালো রং এবং দানাগুলো পুষ্ট ও শক্ত হয়।  ফসল পরিপক্ব হতে খরিফ-২ মৌসুমে ৯০-১০০ দিন এবং রবি মৌসুমে ১০০-১১০ দিন সময় লাগে।
ফলনঃ
রবিঃ- ২.০-২.৩ টন/হেক্টর।
খরিফঃ- ২ - ১.৫-১.৮ টন/হেক্টর ।
সেচ প্রয়োগঃ (৩):তৃতীয় সেচ বীজ বপনের ৭০ দিন পরে (বীজ পুষ্ট হবার আগে) দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ (২):দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫০ দিন পর (পুষ্পস্তবক তৈরীর সময়) প্রয়োগ করতে হবে ।

গাছ পাতলাকরণঃ
অতিরিক্ত গাছ থাকলে চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি হিলে/গোছায় ১ টি করে সুস্থ-সবল গাছ রেখে বাকি গাছগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ (১)
সূর্যমূখী ফসলের ফলন বেশি পেতে হলে কয়েকবার পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৩০ দিন পর (গাছে ফুল আসার আগে) প্রয়োগ করতে হবে ।
আগাছা দমন ও নিড়ানিঃ (১):চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম বার নিড়ানি দিতে ও আগাছা দমন করতে হবে ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url