পেঁয়াজ চাষাবাদ
পেঁয়াজ চাষাবাদ পদ্ধতি আলোচনা
পেঁয়াজ পরিচয়
একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি খুবই জনপ্রিয় মসলা। দেশভেদে এর নামের বৈচিত্র্যতা রয়েছে। এটি Japanese bunching onion, Welsh onion, Yard onion, Stem onion, Stone onion, Salad onion, Ceboule ইত্যাদি নামেও পরিচিত। পাতা পেঁয়াজের উৎপত্তিস্থান এশিয়াতে (সাইবেরিয়া, চীন)। পাতা পেঁয়াজের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো হলো জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলংকা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা ও সাইবেরিয়া। গুরুত্বের বিবেচনায় জাপানে এ ফসলটি বাল্ব পেঁয়াজের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের বসতভিটায় ব্যাপকভাবে এ পেঁয়াজের চাষ করে থাকে। এ প্রজাতির গাছের মূলত দুইটি অংশ-সবুজ পাতা ও সাদা মোটা সিউডোস্টেম (Blanched pseudostem)।
এ জাতীয় পেঁয়াজে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের (Allium cepa খ.) মতো বাল্ব উৎপাদন হয় না। তবে সাদা সিউডোস্টেমের গোড়ায় বাল্বের মতো বৃদ্ধি (Bulb enlargement) পরিলক্ষিত হয়। এ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী তবে একবর্ষ বা দ্বিবর্ষ হিসেবে চাষ করা হয়ে থাকে। বীজ বা কুশির মাধ্যমে পাতা পেঁয়াজের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। এ ফসলটির কুশি উৎপাদনের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রজাতিটি পার্পল ব্লচসহ বিভিন্ন রোগ সহিষ্ণু/প্রতিরোধী (Tolerant/Resistant)। তাই পাতা পেঁয়াজ সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্কর করে রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা যায়। এর পাতা ও ফুলের দণ্ড (Scape) ফাঁপা। এর স্বাদ ও গন্ধ প্রায় সাধারণ পেঁয়াজের মতো।
এ প্রজাতির পেঁয়াজে এলাইল সালফাইড নামক উদ্বায়ী পদার্থের কারণেই গন্ধের সৃষ্টি হয়। এ মসলাটি রন্ধনশালায় (Culinary) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মূল বা হলুদ পাতা ছাড়া ফুলের দ-সহ সব অংশই বিভিন্ন খাদ্যদ্রবকে রুচিকর ও সুগন্ধপূর্ণ করার মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য খাওয়া হয়। ইহা সালাদ হিসেবে কাঁচা অথবা বিভিন্ন তরকারি/অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত মোটা সাদা সিউডোস্টেম গোশত বা অন্যান্য তরকারিতে এবং সবুজ পাতা সালাদ হিসেবে অথবা সুপ, নুডুলস, স্যান্ডউইজ ইত্যাদি খাবারকে সুগন্ধ করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইহার যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাতা পেঁয়াজের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আর্দ্রতা ৭৮.৯%, আমিষ ১.৮%, চর্বি ০.১%, খনিজ পদার্থ ০.৭%, শর্করা ১৭.২%, ক্যালসিয়াম ০.০৫%, ফসফরাস ০.০৭%, লোহা ২.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ৩০ আই ইউ, ভিটামিন-বি১ ০.২৩ মি.গ্রাম, ভিটামিন-সি ১১ মি.গ্রাম ও এ্যানার্জি ৩৪ কিলোক্যালরি আছে। সাদা সিউডোস্টেমের তুলনায় সবুজ পাতায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এর অনেক ঔষধি গুণাবলিও রয়েছে।
তা পারিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। মাথাব্যথা, ক্ষতের ব্যথা ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে উপশমে সহায়তা করে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এ পেঁয়াজ খেলে রোগ থেকে উপশম পেয়ে থাকেন। সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে গোছা (Clump) আকারে পাতা পেঁয়াজের যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে। বিদেশি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে চাষ উপযোগী ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ নামক একটি উন্নত জাত ২০১৪ সনে মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, বগুড়া কর্তৃক কৃষকপর্যায়ে চাষাবাদের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এ দেশে বাল্ব পেঁয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে পেঁয়াজের সারাবছর চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে বসতভিটাসহ মাঠপর্যায়ে সারা বছর (Year-round) চাষ করা সম্ভব। আশা করা হচ্ছে এ জাতের পাতা পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যাবে এবং অন্যদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমেও রোগমুক্ত উন্নত হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। নিচে এ জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো।
মাটি ও আবহাওয়াঃ
দোআঁশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা দোআঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রচুর দিনের আলো, সহনশীল তাপমাত্রা ও মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকলে পেঁয়াজের ফলন খুব ভাল হয়। রবি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ১৫-২৫ সে. তাপমাত্রা পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ছোট অবস্থায় যখন শেকড় ও পাতা বাড়তে থাকে তখন ১৫ সে. তাপমাত্রায় ৯-১০ ঘন্টা দিনের আলো থাকলে পেঁয়াজের বাল্ব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে ১০-১২ ঘন্টা দিনের আলা ও ২১ সে. তাপমাত্রা এবং গড় আর্দ্রতা ৭০ শতাংশ থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ভালভাবে বাড়ে, বীজ গঠিত হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। মাটির পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৫ হলে পেঁয়াজের ফলন ভাল হয়। হালকা মাটিতে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে পেঁয়াজের ফলণ ভাল হয়। অধিক ক্ষার বা অম্ল মাটিতে পেঁয়াজের আকার ছোট হয় ও পুষ্ট হতে বেশী সময় লাগে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
পেঁয়াজের কন্দ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফুলের কলি দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্রই তা ভেঙ্গে দিতে হবে। পেঁয়াজ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পেঁয়াজের জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সেচের পর জমি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
পেঁয়াজ সংরক্ষনঃ
১। ভালভাবে পরিপক্কতার পর উজ্জ্বল রৌদ্রযুক্ত দিনে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে, পাতা ও শিকড় কেটে ৫-৭ দিন বায়ু চলাচলে সুবিধাযুক্ত শীতল ও ছায়াযুক্ত স্হানে শুকিয়ে নিতে হয়।
২। ভাল কন্দগুলো যথাযথভাবে বাছাই করে শুষ্ক, ঠান্ডা ও বায়ু চলাচলের উপযুক্ত জায়গায় বাঁশের মাচা তৈরি করে ৩-৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া ঘরের সিলিং প্লাষ্টিক বা বাঁশেরর্ যাক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে রেখে সংরক্ষণ করা যায়।
৩। গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজে পানির পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় শীতকালিন পেঁয়াজের তুলনায় সংরক্ষণ ক্ষমতা কম। উল্লেখ্য যে, ছোট কন্দ বিশিষ্ট পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়।
শীতকালিন পেঁয়াজ সংগ্রহঃ
পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে পাতা ক্রমশ হলদে হয়ে যায় এবং পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে নুইয়ে পড়ে। যখন ৭০-৮০% পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে নেতিয়ে পড়ে তখনই পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত সময়। সাধারণত রোপনের ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে শীতকালিন পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত হয়।
গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ সংগ্রহঃ
১। পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে পাতা ক্রমশ হলদে হয়ে যায় এবং পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে নুইয়ে পড়ে। যখন ৭০-৮০% পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে নেতিয়ে পড়ে তখনই পেঁয়াজ তোলার উপযুক্ত সময়।
২। গ্রীষ্মকালিন পাকা পেঁয়াজ বেশি দিন জমিতে থাকলে এর ঝাঝ কমে যায়।
৩। গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ আগাম চাষের ক্ষেত্রে রোপনের ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে চারা রোপনের ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়।
রোপণ পদ্ধতিঃ
সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬ ইঞ্চি এবং পেঁয়াজ থেকে পেঁয়াজের দূরত্ব ৪ ইঞ্চি রাখতে হবে। সরাসরি জমিতে বীজ বুনে, কন্দ ও চারা রোপণ করে পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে এমনকি সারা বছরের ফসল রুপে পেঁয়াজের চাষ হয়। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বীজতলায় বীজ বুনে, চারা তৈরী করে জমিতে রোপণ করা হয়। সরাসরি ছোট ছোট কন্দ লাগিয়েও পেঁয়াজের চাষ করা যায়। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর (আশ্বিন-কার্তিক) মাসে বীজতলায় বীজ বোনা হয় এবং ৫০-৫৫ দিন পর চারা জমিতে রোপণ করা হয়। চারার শিকড় ও মাথা কেটে জমিতে রোপণ করতে হয়। সমগ্র উত্তরাঞ্চল, যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চলে সারা বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই এবং বর্ষাকালে জুলাই থেকে অক্টোবর এবং শীতকালে অ্ক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ চাষ করা যায়।
প্রতি কেজিতে ৬০-৭৫ টি পেঁয়াজ ধরে এরুপ পেঁয়াজ রোপণ করতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
রবি মৌসুমঃ
পেঁয়াজের জমিতে মাটির প্রয়োজনীয় রস না থাকলে প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর পানি সেচ প্রয়োজন।
খরিফ মৌসুমঃ
পেঁয়াজ চাষের জন্য সেচের গুরুত্ব অপরিসীম। সেচ সাধারণত বৃষ্টিপাত, বোনার সময়, মাটির অবস্থা ও চারা বা কন্দের উপর নির্ভর করে। পেঁয়াজের জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। এটেল মাটি থেকে হালকা মাটিতে বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। চারা মাটিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ৩ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। কন্দ গঠিত হয়ে গেলে সেচ কম লাগে এবং পেঁয়াজের বাল্ব পরিপক্ক ও সংগ্রহের ক্ষমতা হ্রাস পায়। পেঁয়াজ ফসল দীর্ঘদিন সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে এবং হঠাৎ করে সেচ দিলে কন্দের শল্কপত্র ফেঁটে যেতে পারে এবং বাজার মূল্য কমে যায়। তাই সবসময় জমিতে জো অবস্থা বজায় রাখতে হবে।
বীজতলা তৈরীঃ
বীজতলা সাড়ে ৬ হাত × সোয়া ২ হাত আকারের এবং ৩-৪ ইঞ্চি উচু হতে হবে। প্রতি বীজতলায় ২৫-৩০ গ্রাম বীজ বুনতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চারা উৎপাদনের জন্য সাড়ে ৬ হাত × সোয়া ২ হাত আকারের ১২০-১৩০ টি বীজতলার প্রয়োজন। বীজ বপনের আগে বীজতলা শোধন করে নেয়া উচিৎ। প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে ব্লুকপার মিশিয়ে বীজতলার মাটি শোধন করে নেয়া উচিত অথবা বীজতলার উপর ৪ ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বীজতলা শোধন করা যেতে পারে। প্রতি কেজি বীজের সাথে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (যেমনঃ ব্যাভিষ্টিন) মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতিটি বীজতলায় ৩-৫ ঝুড়ি পচা গোবর এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে এবং উপরে সামান্য কাঠের ছাই ছড়িয়ে বীজতলা তৈরী করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে উপযুক্ত চারা তৈরী করার জন্য ৩×১ মিটার আকারের ১২০-১৩০ টি বীজতলার প্রয়োজন হয়।
পেঁয়াজ চাষে সার ব্যবস্থাপনাঃ
রবি মৌসুমঃ
হালকা দোঁ-আশ মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণ জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে পেঁয়াজ বেশ বড় ও ভারী হয় এবং সেগুলো অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে প্রতি হেক্টর জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
| সারের নাম | সারের পরিমাণ |
|---|---|
| গোবর/কম্পোস্ট | ৮-১০ টন |
| ইউরিয়া | ২৪০ কেজি |
| টিএসপি | ২২০ কেজি |
| এমওপি | ১৫০ কেজি |
| জিপসাম | ১১০ কেজি |
রবি মৌসুমে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম এবং ইউরিয়া ও এমওপির অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সার যথাক্রমে চারা রোপণের ২৫ এবং ৫০ দিন পর ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। কন্দ বা সরাসরি বীজ বপন করে চাষ করার ক্ষেত্রেও মোটামুটিভাবে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। পিএইচ এর মাত্রা বেশী নীচে হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে ।
খরিফ মৌসুমঃ
হালকা দোআঁশ মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণ জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে পেঁয়াজ আকারে বেশ বড় হয় এবং সেগুলো অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। খরিফ পেঁয়াজ চাষে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
| সারের নাম | সারের পরিমাণ |
|---|---|
| গোবর/কম্পোস্ট | ৭ টন |
| ইউরিয়া | ২৪০ কেজি |
| টিএসপি | ২৫০ কেজি |
| এমওপি | ১৫০ কেজি |
| জিপসাম | ১১০ কেজি |
খরিফ মৌসুমে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম এবং পটাশের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক পটাশ ও ইউরিয়ার অর্ধেক পরিমাণ সার যথাক্রমে চারা রোপণের ২০-২৫ এবং ৪৫-৫০ দিন পর ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। কন্দ বা সরাসরি বীজ বপন করে চাষ করার ক্ষেত্রেও মোটামুটিভাবে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
পিএইচ এর মাত্রা বেশী নীচে হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
বীজের পরিমাণঃ
৩×১ মিটার আকারের প্রতিটি বীজতলায় ২৫-৩০ গ্রাম অথবা প্রতি বিঘায় ৪৭০-৫৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হবে। বীজ বোনার পর ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ১ সেমি. পুরু করে ঢেকে দিতে হয়। বীজ বোনার পর হালকা সেচ দিয়ে বীজতলা ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে এবং তারপর প্রয়োজন অনুসারে ১-২ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। বোনার প্রায় ৫-৭ দিন পর বীজ অংকুরিত হয়ে চারা বের হবে। বীজ বপনের ৪৫-৫৫ দিন পর চারা যখন ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়।
বীজ উৎপাদনের জন্য কন্দের আকার ভেদে হেক্টর প্রতি প্রায় ১-১.২ টন কন্দের প্রয়োজন।
