মাল্টা চাষ পদ্ধতি
মাল্টার উন্নত জাত ও আধুনিক চাসাবাদ পদ্ধতি
![]() |
| ekrishi24,মাল্টা চাষ পদ্ধতি |
সাইট্রাস ফসলের মধ্যে মাল্টা অন্যতম জনপ্রিয় ফল। বিশ্বের সর্বমোট উৎপাদিত সাইট্রাস ফসলের দুই তৃতীয়াংশ হলো মাল্টা। ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীন মাল্টার আদি উৎপত্তি স্থল। তবে বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব–উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বেশী চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে এই ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন বেড়ে চলছে। কমলার তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশী হওয়ায়, পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায় সহজেই চাষ করা যাচ্ছে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক এর চাষ করে সফল হচ্ছেন। উন্নত জাত ও আধুনিক চাসাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব।
➤জলবায়ুঃ
কম বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকাল অর্থাৎ শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী। বায়ুমণ্ডলের আদ্রতা ও বেশী বৃষ্টিপাত মাল্টা ফলের গুনাগুণকে প্রভাবিত করে। বাতাসে অধিক আদ্রতা ও বৃষ্টিপ্রবন এলাকায় মাল্টার খোসা পাতলা হয় এবং ফল বেশী রসালো ও নিন্ম মানের হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ফলের মান ও স্বাদ উন্নতমানের হয়। আদ্র জলবায়ুতে রোগ ও ক্ষতিকর পাকার আক্রমণ বেশী হয়। মাল্টা গাছ আলো পছন্দ করে এবং ছায়ায় বৃদ্ধি ও ফলের গুণগত মান কমে যায়।➤মাটিঃ
সব ধরণের মাটিতে জন্মালেও সুনিষ্কাশিত, উর্বর, মধ্যম থেকে হালকা দোয়াস মাটি মাল্টা চাষের জন্য উত্তম। মধ্যম অম্ল থেকে সামান্য ক্ষারীয় মাটিতে মাল্টা জন্মে। তবে ৫.৫ থেকে ৬.৫ (ph) অম্লতায় ভালো জন্মে। জলাবদ্ধতা মোটেও সহ্য করতে পারেনা এবং উচ্চ তাপ ও লবণের প্রতি সংবেদনশীল।➤জাতঃ
বাংলাদেশের বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সবুজ ও কমলা রঙের মাল্টা বিক্রি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট “বারী মাল্টা- ১” নামে ২০০৩ সালে মাল্টার একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, যে জাতটির পাকা ফল দেখতে সবুজ ও খেতে সুস্বাদু । জাতটির বৈশিষ্ট নিন্মে দেয়া হলঃ–➤জাতের বৈশিষ্টঃ
☞বারী মাল্টা ১ঃ
বৈশিষ্ট
♥চেনার উপায়ঃ
☞বারি মাল্টা -১
➤মাল্টার বংশ বিস্তারঃ
বীজ ও কলমের মাধ্যমে মাল্টার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে বীজের চারা আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়ার সাথে সমন্বয় করে বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না। তাই কলমের মাধ্যমেই চারা তৈরি করা উত্তম। তাছাড়া কলমের তৈরি চারায় মাতৃ গুন বজায় থাকে ও দ্রুত ফল ধরে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধী ও বলিষ্ঠ শিকড় সমৃদ্ধ আদি জোড়ের মাধ্যমে কলম করলে গাছের জীবনকাল ও ফলন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।➤জোড় কলমঃ
গ্রাফটিং এর জন্য প্রথমে রুটস্টক (আদিজোড়া) উৎপাদন করতে হবে। রুটস্টক হিসেবে বাতাবিলেবু, রাফলেমন, কাটা জামির প্রভৃতি ব্যাবহার হয়। অতপর কাঙ্ক্ষিত মাতৃ গাছ হতে সায়ন (উপজোড়) সংগ্রহ করে রুটস্টকের উপর স্থাপন করে মাল্টার গাফটিং তৈরি করা হয়। রুটস্টক হিসেবে এক থেকে দের বসর বয়সের সুস্থ্য, সবল, সোজা, বাড়ন্ত চারা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত মাতৃগাছ হতে সায়ন তৈরির জন্য দুটি চোখ সহ ৫/৬ সেমি লম্বা ও ৮/৯ মাস বয়সের ডালা সংগ্রহ করতে হবে। মধ্য বৈশাখ-মধ্য ভাদ্র (মে- আগস্ট) মাস পর্যন্ত গ্রাফটিং করা যায়। ভিনিয়ার ও ক্লেফট গ্রাফটিং উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার কলম তৈরি করা যায়। সাধারণত কলম করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে রুটস্টক ও সায়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয় ও সায়নের চোখ ফুটে কুশি বের হয়।কলম হতে একাধিক ডাল বের হলে সুস্থ্য সবল ও সোজা ভাবে বেড়ে ওঠা ডালটি রেখে, বাকীগুলো কেটে ফেলতে হবে। আদিজোড়া থেকে বাড়ন্ত কুশি নিয়মিত কেটে দিতে হবে।
➤জমি নির্বাচন ও প্রস্তত পদ্ধতিঃ
সারাদিন রোদ পরে ও বৃষ্টির পানি জমে না এমন উচু বা মঝারি উচু জমি মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।জমির পানি সহজেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচিত জমি সমতল হতে হবে, তা না হলে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।আগাছা পরিস্কার ও আশেপাশে উচু গাছ থাকলে ডালা ছেঁটে দিতে হবে।➤রোপন পদ্ধতিঃ
ষড়ভুজ বা বর্গাকার পদ্ধতিতে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে।মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য ভাদ্র ( মে- আগস্ট) মাস রোপণের উত্তম সময়। বা মে থেকে অগাষ্ট মাস মাল্টা গাছের চারা/কলম লাগানোর উত্তম সময়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে পানি সেচের ব্যাবস্থা করা গেলে যে কোন সময় মাল্টার চারা/কলম লাগানো যাবে।➤মাদা তৈরিঃ
চারা রোপনের জন্য ৭৫ সেমি দৈঘ্যে, ৭৫ সেমি’র প্রস্থ এবং ৭৫ সেমি গভীরতার ৩-৪ মিটার দূরত্বে গর্ত করে নিতে হবে।গর্ত করার পর, জৈব সার ১৫ কেজি, ছাই ৪-৫ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম, ৫ গ্রাম বরিক এসিড,এবং চুন ২৫০ গ্রাম গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন মাটি দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে।
➤চারা/ কলম রোপণঃ
১৫ দিন পর গর্তের মাটি আবার কোদাল দিয়ে আলগা করে সংগ্রহীত চারা গর্তের মাঝ বরাবর সোজা করে রোপণ করতে হবে।চারা রোপনের পর প্রয়োজন মত পানি দিতে হবে এবং শক্ত খুঁটি গেড়ে তার সাথে বেঁধে দিতে হবে। যাতে করে সদ্যরোপনকৃত চারা বাতাসে হেলে না পড়ে।➤মাল্টা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
মাল্টার চারা রোপনের পর প্রতি বছর নিয়ম করে তিন বার গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে।
✔প্রথমবারঃ
মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র মাসের মধ্যে(মার্চ মাসে)।✔দ্বিতীয়বারঃ
বর্ষার আগে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাসে (মে মাসে)।✔তৃতীয়বারঃ
বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর মাসে)।☞বছরে মোট এই তিনবারে সার প্রয়োগ করতে হবে, তবে সেচের ব্যবস্থা না থাকেল কেবল প্রথম ও শেষ মোট দুই বারে সার প্রয়োগ করাটাই উত্তম।
♥গাছের বয়স অনুসারে সারের মাত্রাঃ
চারার যথাযথ বৃদ্ধির জন্য সময় মত সঠিক পরিমান ও পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। বয়স ভেদে গাছ প্রতি সার প্রয়োগের পরিমান নিন্মে তা দেয়া হলো-
