রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
ধান আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য শস্য। আমাদের দেশে বছরব্যাপী পর্যায়ক্রমে বােরাে, আউশ এবং আমন মৌসুমে ধান চাষ হয়ে থাকে। ধান উৎপাদনে রােপা আমন ধানের গুরুত্ব একটু আলাদাভাবে অপরিসীম।
দেশের মােট ধানী জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে রােপা আমন চাষ করা হয় এবং মােট উৎপাদনের অর্ধেক পরিমাণ ধান আসে রােপা আমন আবাদ থেকে। তাই রােপা আমন ধানের ক্ষেত্রে একটু বিশেষ খেয়াল ও যত্ন নেওয়া উচিত।
|
| রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি |
📣📯 বৃষ্টির অভাবে সম্পূরক সেচ
বৃষ্টির জন্য প্রকৃতির উপর ভরসা রাখতে হয়, মাঝে মাঝেই আশানুরুপ বৃষ্টি সময় মতাে সমভাবে হয় না। আমন মৌসুমে চারা লাগানাে থেকে শুরু করে থােড় পর্যন্ত বর্ষাকাল বা বর্ষার শেষাংশটুকু পায় বিধায় বৃষ্টির পানির সরবরাহ থাকে। আমন চাষাবাদ পুরোটাই বৃষ্টি নির্ভর। তবে প্রতি বছর সকল স্থানে বৃষ্টিপাত এক রকম হয় না। এমনকি একই বৎসরের একই স্থানে সবসময় সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। আমন মৌসুমে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০% হয়ে থাকে, যা আমন আবাদের জন্য যথেষ্ট।বৃষ্টি-নির্ভর ধানের জমিতে যে কোন পর্যায়ে সাময়িকভাবে বৃষ্টির অভাবে খরা হলে অবশ্যই সম্পূরক সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূরক সেচের সংখ্যা একাধিক হতে পারে।তবে আমন মৌসুমে সেচ দেয়া হয় মাত্র ১১% জমিতে। কারণ আমন চাষাবাদ বৃষ্টি নির্ভর।
আমন ধানের আধুনিক জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW
📯📯 সম্পূরক সেচ কি
বৃষ্টি-নির্ভর ধানের জমিতে সাময়িকভাবে বৃষ্টির অভাবে খরা জণিত কারণে সেচ দেয়াকে সম্পূরক সেচ বলে।
ধান গাছ পানি পছন্দ করে, তবে সব সময় পানি রাখার প্রয়েজিন নেই। তবে প্রজনন পর্যায়ে ধানী জমিতে পানির কোন বিকল্প নেই।
♦⏺️ সম্পূরক সেচের প্রয়ােজনীয়তা
সাধারণত আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি) সময়ে আমনের চারা রােপণ করার উপযুক্ত সময় এবং আগাম জাতগুলাে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত (অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম) কাটা হয়। তবে বেশীর ভাগ আমন ফসল অগ্রাহায়নের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত
(নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি) সময় কাটা হয়। যদি আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শেষে আর কোন বৃষ্টি না হয় তবে আমন ফসল মারাত্বকভাবে খরায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আশ্বিনের শেষ (অক্টোবরের মাঝামাঝি) পর্যন্ত যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হলে সে বৎসর খরার প্রভাব কম পড়ে। অগ্রাহায়ণের প্রথমে (নভেম্বরের মাঝামাঝি) বৎসরের শেষ বৃষ্টি যথেষ্ট পরিমাণে হয়ে থাকলে আমনে খরার কোন প্রভাব থাকে না।
আমন ধানের আধুনিক জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW
অতএব, বৎসরের শেষ বৃষ্টির ব্যপকতা ও বর্ষণের সময়ের উপর খরার প্রস্তাব অনেকাংশে নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র একটি সম্পূরক সেচের মাধ্যমে প্রায় ৬০% ফলন বাড়ানাে সম্ভব। তাই আমন ধানের আবাদে সম্পূরক সেচের গুরুত্ব অপরিসীম।
✳️⭕ সম্পূরক সেচের পূর্বপ্রস্তুতি
প্রতিটি প্রযুক্তির সঠিক কার্যকারিতা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির উপযুক্ত জ্ঞানের উপর। সম্পূরক সেচের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। পরিকল্পনা ও জ্ঞানের অভাবে অনেক সময় সেচ বা পানির উৎস কাছে থাকা সত্ত্বেও আমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দুটি বা একটি সম্পূরক সেচ নিকটস্থ ডিপ বা শ্যালাে টিউবওয়েল থেকে দেয়া যেতে পারে।
তাছাড়া নিকটস্থ নদী, খাল-বিল, পুকুর বা ডােবা থেকে অনায়াসে একটি বা দুটি সেচ দেয়া যায়। কারণ তখন পানির কোন অভাব থাকে না। তবে এর জন্য অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতির দরখার। প্রয়ােজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সেচ প্রয়ােগের উপায় যেমন সেচ যন্ত্রের ব্যবস্থা, নালা, আর্থিক এবং মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। সম্পূরক সেচের প্রয়ােজন বুঝার জন্য বৃষ্টিপাত ও খরার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়ােজন।
আমন ধানের আধুনিক জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW
📢📣 সম্পূরক সেচের উৎস
আমন মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বিধায় সম্পূরক সেচ জমির নিকটস্থ গর্ত, পুকুর-খাল-বিল, নদী-নান টিউবওয়েল থেকে অতি সহজে দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি ধরে রেখেও সেচের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম্নলিখিত উপায়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়, যেমন-
ক) বৃষ্টির পানি সংগ্রহঃ
ধানী জমির এক কোনায় ছােট একটি গর্ত তৈরী করে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে প্রয়ােজনে তা সেচ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গর্তটি ২ মিটার গভীর এবং জমির মােট আকারের শতকরা ৫ ভাগ হলেই চলবে। এই গর্ত থেকে ৬০ মিলিলিটার পরিমাণের সম্পূরক দেয়া সম্ভব। খরা-প্রবণ এলাকায় এই পদ্ধতি অতি সহজেই প্রয়োগ করা যায়।
আমন ধানের আধুনিক জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW
খ) আইল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
প্রাচীন কৃষক ভাইয়েরা আইল ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তবে একটু গুরুরেত্বও সাথে আইল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহার করা যায়। এজন্য আইলের সুষ্ঠু মেরামত ও আইলের উচ্চতা বাড়াতে হবে। আমন জমির আইল ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে জমানাে বৃষ্টির পানির কার্যকারিতা ৯০% পর্যন্ত বাড়ানাে সম্ভব। এই পানি ব্যবহার করে সাময়িক খরা প্রতিরােধ করা সহ ২০-২৫ % পর্যন্ত ফলন বাড়ানাে যায়।
⏺️✳️ দেরিতে রােপণে সম্পূরক সেচ প্রয়ােগ
যদিও মাঠে আগাম জাতের ধান কাটার ধুম পড়েছে। তারপরও যারা নাবি জাত ও একটু দেরিতে রােপণ
করেছিলেন তাদের জমিতে খরা হওয়ার প্রবণতা হতে পারে। ধান গাছের প্রজনন পর্যায় বিশেষ করে শিষ বের হওয়া, দুধ অবস্থা স্তরগুলাে খুবই নাজুক। এ স্তরগুলােতে ধান গাছে প্রয়ােজনীয় পানির খুবই প্রয়ােজন।
তাই কৃষকেরা ধানের মাঠে গিয়ে খরার অবস্থা লক্ষ্য করে, প্রয়ােজনে নিকটস্থ খাল বিল, পুকুর বা নদী থেকে একটি সেচ দেওয়ার উদ্যোগ নিবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, খরা কবলিত ধানের চেয়ে সম্পূরক সেচযুক্ত ধানের ফলুন হেক্টরে প্রায় ১ টন বা ১০০০ কেজি ধান বেশি হয়।
📢📯ধান গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে পানির চাহিদা
প্রথমেই আমাদের মনে রাখতে হবে ধান গাছ জলজ উদ্ভিদ নয়। তবে শারীরবৃত্তীয় চাহিদা জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির প্রয়ােজন। যদিও আমন মৌসুম সেচ নির্ভর নয় তবুও ধান গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে কী পরিমাণ পানির চাহিদা থাকে তা জেনে রাখা ভালাে। চারা লাগানাের সময় ছিপছিপে থেকে সর্বোচ্চ ১ ইঞ্চি, চারা লাগানাে থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত ১.৫-২ ইঞ্চি, চারা লাগানাের ১১ দিন পর থেকে থােড় আসা পর্যন্ত ১-১.৫ ইঞ্চি, কাইচ থােড় হওয়ার সময় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত ২-৩ ইঞ্চি এবং ধান কাটার ১০-১২ দিন আগে পর্যায়ক্রমে পানি বের করে দিতে হবে। এ মৌসুমে খরা দেখা দিলে সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমন ধানের আধুনিক জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW
⭕⏺️ সম্পূরক সেচ প্রয়ােগ করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন
খাদ্য নিরাপত্তা তথা প্রধান খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনে আমন ধানের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে খরা কবলিত এলাকায় সম্পূরক সেচ প্রয়ােগ করে আমন ধান উৎপাদন তথা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করতে পারে।
✳️♦ যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।
