আমন ধান চাষে সার ব্যবস্থাপনা

 ভালো_ফলন_পেতে ধান চাষে সার ব্যবস্থাপনা


আমন মৌসুমে ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য সম্ভব হলে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে অথবা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষি পরিবেশ অঞ্চল অনুযায়ী অনুমােদিত মাত্রায় সার প্রয়ােগ করুন।মনে রাখবেন, জমির উর্বরতাভেদে সারের পরিমাণ কম বেশি হবে। প্রতি ১০০ কেজি পঁচা গােবর সারে ১ কেজি ইউরিয়া, ৭৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ১ কেজি এমওপি সার পাওয়া যায়। কাজেই রাসায়নিক সার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে অনুমােদিত মাত্রা থেকে জৈব সার থেকে প্রাপ্ত বিয়ােগ দিয়ে বাকিটুকু প্রয়ােগ করতে হবে।ডিএপি সার প্রয়ােগ করলে ২০% ইউরিয়া সার কম প্রয়ােগ করুন।


জমির উর্বরতাভেদে সারের পরিমাণ কম বেশি হবে।প্রতি ১০০ কেজি পঁচা গােবর সারে ১ কেজি ইউরিয়া, ৭৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ১ কেজি এমওপি সার পাওয়া যায়।
আমন ধান চাষে সার ব্যবস্থাপনা



♦📯বীজতলায়_সার_প্রয়োগ -

 পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতিনিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।


আমন ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি CLICK NOW


♦📯মূল_জমিতে_সার_প্রয়োগ 

 আমন ধানের অধিক ফলন পেতে সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা অপরিহার্য। রাসায়নিক সারের মধ্যে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (ম্যাগসার, অ্যাগ্রোম্যাগভিট), জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) বা চিলেটেড জিংক (লিবরেল জিংক), বরিক এসিড, সলিউবর বোরন (লিবরেল বোরন) ইত্যাদি সার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। 

তবে অধিকাংশ কৃষক অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু জানা দরকার, অতিমাত্রায় ইউরিয়া প্রয়োগের ফলে জমিতে ফসফরাস ও পটাশজাতীয় সারের পরিমাণ মারাত্মক হারে কমে যায়।


আমন ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি CLICK NOW


♦📯সারের_পরিমাণ 

 বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, উফশী জাতের আমনের উচ্চ ফলন পেতে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ২১ কেজি ইউরিয়া, ৭-১০ কেজি টিএসপি/ ডিএপি, ৩.৫-১৩.৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪-১১ কেজি জিপসাম, ১-২ কেজি জিংক সালফেট এবং ৩৫ মণ জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।


 🔷 গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ কম ইউরিয়া প্রয়োগে ১৫-২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। সবুজ সার হিসেবে ধইঞ্চার চাষ, গ্রীষ্মকালীন মুগ/মাষকলাই চাষ করলে ইউরিয়ার ব্যবহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।


🔷 অন্যদিকে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি(DAP) ব্যবহার করলে একই সঙ্গে ইউরিয়া ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করা সম্ভব। জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) সার ফসফরাস জাতীয় সারের সঙ্গে একত্রে ব্যবহার করা যাবে না। এ সমস্যা সমাধানে জিংক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিংক যেমন-লিবরেল জিংক ও সলিউবর বোরন, যেমন-লিবরেল বোরন প্রয়োগ করা যেতে পারে। মূল জমিতে ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর ১ম বার এবং ৪০-৪৫ দিন পর ২য় বার ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম লিবরেল জিংক ও ২ গ্রাম লিবরেল বোরন একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে।


🔷 রোপা আমন ধানের জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৩০০ কেজি জৈবসার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার শতকরা ৩০ ভাগ কমানো সম্ভব। এছাড়া রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে জৈব সার সহায়ক ভূমিকা রাখে, মাটির স্বাস্থ্য উন্নতি হয় এবং নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম সরবরাহ ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমিক ও গৌণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।


আমন ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি CLICK NOW


♦📯রোপা_আমনের_সার_প্রয়োগের  নিয়ম


 √চারা রোপণের আগে জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে সমুদয় টিএসপি/ডিএপি, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম ও জিংক সালফেট প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় জিংক সালফেট না দিলে স্প্রে আকারে চিলেটেড জিংক, যেমন-লিবরেল জিংক ব্যবহার করা যায়।


➡️√ অতি নিম্ন ও নিম্ন পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে অথবা চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং ২৫-৩০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হবে। উভয় কিস্তির সারই জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে এবং জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে ও আগাছা দমনকালে ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় কিস্তির সার কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। মধ্যম ও পরিমিত পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি দ্রুত কুশি গজানোর সময় আগাছা দমনকালে এবং দ্বিতীয় কিস্তি কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।


➡️√√ নাইট্রোজেন সারের উৎস হিসেবে গুটি ইউরিয়া প্রয়ােগের ক্ষেত্রে চারা রােপণের৭-১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গােছার মাঝখানে ২-৩ ইঞ্চি কাদার গভীরে ০.৯ গ্রাম ওজনের ২ টি,এবং ওজন যদি ১.৮ গ্রাম হয় তবে ১ টি করে  পুঁতে দিতে হবে।


➡️√√ জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়ােগ করলে সব সময়ই এক থেকে দেড় ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। তবে হালকা বুনটের মাটি অর্থাৎ যে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম সে মাটিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা যাবে না।


➡️√√ এলসিসি ও গুটি ইউরিয়া উভয় পদ্ধতিতে ইউরিয়া সাশ্রয় হয় এবং ফলন বাড়ে।পরীক্ষায় দেখা গেছে, গুটি ইউরিয়া প্রয়ােগে গাছের সুপ্ত ক্ষুধা থাকে না বিধায় ফলন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। 


➡️√√ আর বীজ ফসলের জমিতে কখনই অতিরিক্ত ইউরয়া ব্যবহার করা যাবে না কেননা অতিরিক্ত ইউরিয়ার কারণে রােগ-বালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায় এবং বীজের গুণগতমান বিনষ্ট করে ফেলে।


✳️>>আমনের অধিক ফলন পেতে সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সম্পূরক সেচ এবং সময়মত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। 


আমন ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি CLICK NOW



🚫❌ধান গাছে ইউরিয়া সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেনঃ-


★জমি শুকনো হওয়া যাবে না


★পানি বেশি হওয়া যাবে না


★গাছের পাতায় পানি জমে থাকা যাবে না




একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, হাইব্রিড ধানের বীজ পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।


আমন ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি CLICK NOW


🔷যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url