কীটনাশক পরিচিতি | কীটনাশক
কীটনাশক পরিচিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
কীটনাশক কিঃ
Pesticide বা কীটনাশক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যা কীটপতঙ্গকে মেরে ফেলতে
সহায়তা করে।যা (Insecticide) রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবন
প্রক্রিয়ায় বিপর্যয় ঘটিয়ে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে ব্যবহার্য
দ্রব্য।
|
| কীটনাশক |
>>বেশিরভাগ কীটনাশক মানুষ ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। তাই কীটনাশক প্রয়োগে সতর্কতা ও সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
>>রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে প্রস্তুতকৃত কীটনাশক মূলতঃ পোকা-মাকড় নির্মূলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর প্রয়োগে পোকামাকড়ের ডিম, লার্ভাও বিনাশ ঘটে থাকে। সাধারণতঃ
>ছত্রাক দমনে- fungicide
>পোকামাকড় দমনে- insecticide
>আগাছা দমনে -herbicideনে
>নেমাটোড বা কৃমি দমনে- nematicide
> ইদুর বা দাঁত বিশিষ্ট প্রাণী দমনে- rodenticide
>মাকর, মাইট দমনে -acaricide/miticide
>শামুক জাতীয় দমনে- molluscicide
>ব্যাকটেরিয়া দমনে- bactericide
>শ্যাওলা, অ্যালজি দমনে -algicide
>পাখি দমনে -avicide ব্যবহার করা হয়।
যেভাবে কীটনাশক কাজ করে -
১.কীটপতঙ্গের কোষীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তেল
২.জৈবিক কার্যক্রম পরিবর্তন বা নষ্ট করার মাধ্যমে। রোটেনন, সায়ানাইড
৩.এনজাইম বা প্রোটিনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে। কপার
৪.হরমোনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে। ফেনোক্সি আগাছানাশক
৫. সালোকসংশ্লেষণ, খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে।
>>>আপনি জানেন কি?
|
| কীটনাশকের মাত্রার ছবি |
প্রতিটি কীটনাশকের বোতলে সবুজ, নীল,হলুদ এবং লাল দাগ থাকে। আমরা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি সবুজ রঙের চিহ্ন ব্যবহার
করতে। এতে ক্ষতিকর মাত্রা কম থাকে। এই কীটনাশক ব্যবহার করলে, পোকা মারা
যাবে,কিন্তু সময় নেবে। হয়তো কীটনাশক ব্যবহারের একঘণ্টা পর পোকা মারা যাবে।আর
লাল রঙের চিহ্নযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে পোকা মারা যাবে,
কিন্তু এটা ক্ষতিকর। অনেক কৃষক আমাদের পরামর্শ না শুনে তা ব্যবহার করে। ফলে
সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক থাকে।
কীটনাশকের প্রকারভেদ
কীটনাশক অজৈব কিংবা জৈব পদার্থ হতে পারে এবং এগুলি তিনটি সাধারণ শ্রেণিতে বিভাজ্য-
১)খাদ্যবিষ
২)স্পর্শবিষ ও
৩)ধোয়া বিষ (fumigant)।
বাড়িঘর, শস্যগুদাম বা গ্রীনহাউজের মতো আবদ্ধ স্থানে রক্ষিত পণ্য দ্রব্যের
ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে সাধারণত ধোয়াবিষ বা বিষগ্যাস সর্বাধিক
কার্যকর। বিকর্ষক (repellants), আকর্ষক (attractants), রাসায়নিক বন্ধ্যাকর
(chemosterilants), ফেরোমোন (phermones) ইত্যাদি কিছু পদার্থও কীটপতঙ্গ
নিয়ন্ত্রণে ব্যবহূত হয়, কিন্তু এগুলির কার্যকারিতার ধরন ভিন্নতর। সাধারণত
এসব রাসায়নিক পদার্থ বিষাক্ত নয়।
উৎপত্তি অনুসারে কীটনাশক মূলত ২ প্রকারের।যথা-
১)অজৈব কীটনাশক।
২)জৈব কীটনাশক।
১)অজৈব কীটনাশক
আর্সেনিক, লেড, সালফার, ক্লোরিন ইত্যাদি ঘটিত বিভিন যৌগ।২)জৈব কীটনাশক
রজৈব কীটনাশক আবার দুই ধরনের।যথা-
a)উদ্ভিজ্জ বা উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত কীটনাশক যেমন - রোটেনন, নিকোটিন, পাইথ্রিন
b)কৃত্রিম রাসায়নিক - কৃত্রিম রাসায়নিক কীটনাশক ৩ ধরনের হয়।
যথা -ক)জৈব ক্লোরিন - ডিডিটি, গ্যামাক্সিন
খ)জৈব ফসফেট - ম্যালানিয়ন, প্যারাথিন
গ)কার্বামেট - সেভিন, ডায়াজিনন
c)বিষক্রিয়ার ধরন অনুসারে সম্পাদনা
বিষক্রিয়ার ধরন অনুসারে কীটনাশক মূলত ৮ ধরনের।যথা-
ক)পাকস্থলি বিষ
খ)স্পর্শ বিষ
গ)প্রবাহ বিষ
ঘ)ধুমায়িত বিষ
ঙ)রাসায়নিক বন্ধ্যাকারক
চ)আকর্ষক
ছ)বিকর্ষক
জ)খাদ্যে অনীহাকারক
আবার, কার্যকারিতার স্হান অনুসারে কীটনাশক মূলত ৫ ধরনের।যথা-
১)দেহ বিষ
২)প্রোটোপ্লাজমিক বিষ
৩)শ্বাসতন্ত্র বিষ
৪)স্নায়ু বিষ
৫)পাকস্থলি বিষ
রাসায়নিক সংযুক্তির ভিত্তিতে কৃত্রিম জৈব-কীটনাশকগুলি বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ হতে পারে।
যেমনঃ
#ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন (chlorinated hydrocarbon), #সাইক্লোডাইন যৌগ (cyclodienes),
#কার্বামেটস (carbamates)
#অরগানোফসফেটস (organophosphates) ইত্যাদি। ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বনের
মধ্যে DDT, মিথোক্সিক্লোর (methoxychlor) ও লিনডেন (Lindane) বহু বছর ধরে
ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়ে আসছে।
সাধারণভাবে ব্যবহূত বিভিন্ন ট্রেডমার্কের কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে। যেমনঃ
ক)দানাদার
১)কার্বোফিউরান (carbofuran), ২)ডায়াজিনন (Diazinon), ৩)ফিপ্রোনিল (Fipronil), ৪)কার্বোসালফান (corbosulfan) ও ৫)ক্লোরোপাইরিফস (Chloropyriphos);
খ)তরল
১)সাইপারমেথ্রিন (Cypermethrin), ২)ডিডিভিপি (DDVP),
৩) ডায়াজিনন (Diazinon), ৪)ডাইমিথোয়েট (Dimethoate), ৫)মনোক্রোটোফস (Monocrotophos),
৬)ম্যালাথিওন (Malathion), ৭)ফসফামিডন (Phosphamidon), ৮)ফেনথোয়েট (Phenthoate), ৯)ফেনিট্রোথিওন (Fenitrothion) ও ১০)বাইড্রিন (Bidrin);
গ)গুঁড়া
১)কার্বারিল (Carbaryl),
২)কার্টাপ (Cartap) ও
৩)এমআইপিসি (MIPC); এবং
ঘ)ইঁদুরনাশক
১) ব্রোমাডিওলোন (Bromadiolone),
২)ব্রোডিওফ্যাকাম (Brodiofacum)
৩)জিংক ফসফাইড (Zinc phosphide)।
ডিডিটি একটি গৃহস্থালী পরিষ্কারকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক যার পুরো নাম
ডাইক্লোরো ডাইফেনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন । একটি মূলত একটি কীটনাশক ।স্নেহপদার্থে (অর্থাৎ তেলে) দ্রাব্য এইবিষ স্পর্শ করলে কীটপতঙ্গদের সোডিয়াম চ্যানেল বেশি খুলে গিয়ে পক্ষাঘাত ঘটে এবং কীটপতঙ্গ মারা যায়।ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোর ব্যবহার করা হয়। ডিডিটি, এলড্রিন, ক্রোমিয়াম,কার্বামেট, আর্সেনিক, সিসা- সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ
ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে অরগানোফসফরাস কীটনাশকগুলি প্রায় সব ধরনের কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। এক্ষেত্রে গবেষণার ফলে সকল বৈশিষ্ট্যের হাজার হাজার কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে। ম্যালাথিয়ন, ডায়াজিনন (বাসুডিন), বাইড্রিন, ডাইমেক্রন, এজোড্রিন, নগোস, নেক্সিওন ইত্যাদি হলো সর্বাধিক পরিচিত কয়েকটি অরগানোফসফেট। এসব কীটনাশকের মধ্যে অধিকাংশরই একাধিক ট্রেডমার্ক সম্বলিত নাম রয়েছে।
কীটনাশকের আবিষ্কারের
কীটনাশকের আবিষ্কারেরনতুন কীটনাশকের আবিষ্কারের বর্তমান ঝোঁকটি প্রায় পুরোপুরিই কৃত্রিম জৈব-রাসায়নিক পদার্থ তৈরির দিকে। ১৮৯২ সালে সম্ভবত এ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের প্রাথমিক ব্যবহার শুরু, যখন জার্মানিতে ৪,৬-ডাইনাইট্রো-অর্থো-ক্রিসোল (4.6-dinitro-o-cresol)–এর পটাশিয়াম লবণ কীটনাশক হিসেবে বাজারজাত করা হয়। ১৯৩২ সালে â-বিউটক্সি- â থায়োসায়ানোডাইইথাইল ইথার (â-butoxy- â thiocyanodiethyl ether) দিয়েই সর্বপ্রথম পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃত্রিম জৈব-কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়।
পরিশেষে
সব কীটনাশক সব পোকার জন্য সমভাবে কার্যকরী নয়। বিশেষ বিশেষ ঔষধ অনেকসময় বিশেষ ধরনের পোকা দমনের জন্য উপযোগী। কীটপতঙ্গ দমনে কীটনাশক ঔষধের সাফল্য নির্ভর করে কতকগুলি শর্তের উপর। উপযুক্ত ঔষধ উপযুক্ত সময়ে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলেই তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে যে, সব কীটনাশকই মারাত্মক বিষ। তাই সতর্কতা ও বিজ্ঞতার সঙ্গে এদের ব্যবহার করতে হবে।
আজকাল কেবল ঔষধের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন দমন পদ্ধতির সমন্বয় সাধন করে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের পদ্ধতিকে সমন্বিত দমন পদ্ধতি (integrated control) বলা হয়। যেহেতু কীটনাশকের ব্যবহার নিশ্চিতরূপে পরিবেশকে দূষিত করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, সেহেতু এর ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা যায় ততই মানুষের জন্য মঙ্গলকর।
যোগাযোগ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও
পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ
করুন।

