পৌষ মাসের কৃষি বা সবজি চাষ।
পৌষ মাসের কৃষি বা শাক-সবজির চাষ
ekrishi24.com: পৌষ মাসে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বেশ জমে ওঠে। বাংলার মানুষের মুখে অন্ন জোগাতে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার সাথে পাল্লা দিয়ে চাষিরা চাষ করে বিভিন্ন ফসল,ফলনও হয় বেশ ভালো। আসুন জেনে নিই পৌষ মাসে চাষ করতে পারেন যেসব শাক-সবজি। তাই পৌষ মাসের কৃষি। পৌষ (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী) পর্যন্ত।
![]() |
| পৌষ মাসের কৃষি বা সবজি চাষ। |
বোরো ধানঃ
বন্যা প্রবণ নিচু এলাকা আগে পানিতে ডুবে যায়। এজন্যে যথাসম্ভব অল্পদিনে পাকে এমন বা আগাম জাতের বোরো ফসলের চাষ করতে হবে যাতে বন্যার পানি আসার আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়।
পৌষ মাসে বোরো বীজতলার যত্নঃ
পৌষ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করা যায়।
অতিরিক্ত ঠান্ডার সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেওয়া যায়। সেইসাথে প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আগাছা ও পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বীজ গজানোর ৪-৫ দিন পর বেডের ওপর ২-৩ সেমি. পানি রাখতে হবে। বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখতে হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিলে সুফল পাওয়া যায়।
পৌষ মাসে বোরো ধান রোপন করুনঃ
মূল জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাদা করে জৈবসার দিতে হবে এবং শেষ চাষের আগে দিতে হবে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার। এবং চারার বয়স ৩৫-৪০ দিন হলে মূল জমিতে চারা রোপণ শুরু করতে পারেন। যার লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার এবং গোছা থেকে গোছার দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার বজায় রেখে প্রতি গোছায় ২-৩টি সুস্থ চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। ধানের চাষ ও জমিতে সার প্রয়োগ ও রোগবালাই এবং পোকামাকড় দমন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে রঙিন লেখয় ক্লিক করুন।
পৌষ মাসের শাক-সবাজীঃ
পৌষ মাসের কৃষি বা সবজি চাষ যেমনঃ-ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে পৌষ মাসে। এছাড়াও যেমন-লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দিতে পারেন। এছাড়াও পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহে খিরা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া চাষ করুন।
পৌষ মাসে কৃষি যেমন টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। এ পোকার আক্রমণে ফলের বৃন্তে একটি ক্ষুদ্র আংশিক বদ্ধ কালচে ছিদ্র দেখা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ফলের ভেতরে পোকার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যাবে। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। টমেটোর আক্রমণ তীব্র হওয়ার আগেই তার সমাধান জানতে রঙিন লেখায় ক্লিক করুন।
টমেটো সংগ্রহ করে বাসায় ৪-৫ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করার জন্য আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলো পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদা মাফিক নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি।
পৌষ মাসে আলুঃ
পৌষ মাসের কৃষি বা সবজি যেমনঃ আলু চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ আলু গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
পৌষ মাসে কৃষি যেমন আলুর সবচেয়ে মারাত্মক রোগ নাবি ধসা বা মড়ক হতে পারে। আবহাওয়া ঠান্ডা, ভেজা, মেঘাচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন তাকলে হঠাৎ করে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ ফসল ধবংশ করে দিতে পারে। সুতরাং রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র বা আবহাওয়া পর্যবেক্ষন করে জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে এবং দেরি না করে প্রয়োজনীয় দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। আলুর চাষের আক্রমণ তীব্র হওয়ার আগেই রোগবালাই ও পোকামাকড় তার সমাধান জানতে রঙিন লেখায় ক্লিক করুন।
আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমন করতে হবে। এবং গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। অতপড় আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পৌষ মাসে গমঃ
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ দিতে হয়। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে সেখান থেকে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দেওয়া ভালো।
পৌষ মাসের ভুট্টাঃ
ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে এরপর সেচ প্রদান করতে হবে। অতপড় ভূট্রা গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিতে হবে।
পৌষ মাসের তুলাঃ
পৌষ মাসে তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। সাধারণত ৩ পর্যায়ে তুলা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। এবং ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ভালো তুলার সঙ্গে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনো না মেশে।
পৌষ মাসের ডাল ও তেল ফসলঃ
পৌষ মাসে মসুর, ছোলা, মোটর, মাষকলাই, মুগ, তিসি পাকার সময়। তবে বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। সূর্সযমুখী ও সরিষার জমিতে ছত্রাকনাশক ও প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এতে তেল ফসল ভালো হয়। এবং ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।
পৌষ মাসের গাছপালাঃ
গত বর্ষায় রোপণ করা ফল, ওষুধি বা কাঠ গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। প্রয়োজনে গাছকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। এবং রোগাক্রান্ত গাছের আক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করে গাছের গোড়ায় পরিমাণমত সেচ দিতে হবে।
পৌষ মাসের প্রাণিসম্পদঃ
শীতকালে পোলট্রিতে অপুষ্টি ও রোগবালাই প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি ও গবাদি প্রাণীর শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পৌষ মাসের মৎস্যসম্পদঃ
পৌষ মাসে পুকুরে পানি কমে যায়, তাই মাছের বিশেষ যত্ন নেওয়া একান্ত দরকার। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও অনেক বেড়ে যায়। এ সময় আগামী বর্ষায় রুইজাতীয় মাছকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটাতে ইচ্ছুক চাষিগণ প্রজননক্ষম বয়ঃপ্রাপ্ত মাছ সংগ্রহ করে মজুত পুকুরে রেখে দেওয়া প্রয়োজন।
বিবিধ
অধিক লাভবান হতে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করুন । স্বল্পকালীন ও উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন করুন
অধিক ফসল ঘরে তুলুন। শ্রম, সময় ও খরচ সাশ্রয়ে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে আবাদ করুনL
যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.com অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।অথবা কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে বা কৃষক বন্ধু সেবার ৩০৩১ নম্বরে কল করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।
