অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation
অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation
ekrishi24: ঘরে বসে ভূমি সেবা পেতে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রবর্তন করেছে অনলাইন ভূমি সেবা। ফলে নাগরিকরা ঘরে বসে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা যেমন- অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখা বা উঠানো, অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ, ঘরে বসে অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি, অনলাইনে ভূমি তথ্য সেবা ইত্যাদি। অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation. সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
![]() |
| অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation |
ই নামজারি বা নামজারি কি
যখন কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বা উত্তরাধিকারসূত্রে, বিক্রয়, দান, খাসজমি বন্দোবস্তসহ বিভিন্ন ধরনের বৈধভাবে অথবা আইনগতভাবে ভূমি বা জমির মালিকানা হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করে সরকারি রেকর্ডে নতুন মালিকানার নাম হালনাগাদ করানোকেই নামজারি বা মিউটেশন বলে। মূলত মিউটেশন অথবা নামজারি বিষয়টি প্রণয়ন করা হয়েছে ভূমির মালিকের মালিকানা নিয়ে জটিলতা এড়ানোর জন্য। বাংলাদেশে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন অনুযায়ী এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নামজারি করতে কি কি লাগে
ই নামজারি বা নামজারি করতে যা লাগে তার নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১) ওয়ারিশমূলে মালিকানা অর্জন ( এক্ষেত্রে অংশনামা সৃজনের মাধ্যমে নামজারি হতে পারে।)
২) ক্রয়, দান, হেবামূলে মালিকানা অর্জিত হলে।
৩) সরকারের নিকট থেকে কেউ খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত নিলে।
৪) সরকারি প্রয়োজনে কোন সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে বা ক্রয় করলে।
৫) নিলাম ক্রয়কৃত জমির ইত্যাদি হলে নামজারি করা যায়।
নামজারি কোথায় করা হয়
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। তবে এখন ঘরে বসেই অনলানে আবেদন করা যায়।
ই নামজারির ওয়েবসাইট
অনলাইনে জমি খারিজ করার ওয়েবসাইট হচ্ছে - https://mutation.land.gov.bd/ এই সাইট ভিজিট করে জমি খারিজ করার জন্য আবেদন করুন।যারা জমি ক্রয় করেছেন কিন্তু এখনো নামজারি করেন নাই তারা ঘরে বসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অনলাইনে নামজারির জন্য আবেদন করতে পারেন। নামজারির আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট হলে ঘরে বসে অনলাইনে জামি খারিজ মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
কিভাবে অনলাইনে জমি খারিজ (নামজারি) করার জন্য আবেদন করবেন তার বিস্তারিত নিয়ম এই ekrishi24 এ তুলে ধরা হলো।
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ই নামজারি করার জন্য কি কি কাগজপত্র আপলোড করতে হবে তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
• আপনার ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)।
• আপনার স্বাক্ষর (বাধ্যতামূলক)।
• জমি ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সুত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)।
• সর্বশেষ খতিয়ান (যার নিকট হতে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তার খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক)।
• ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল ওয়ারিশন সনদ (শুধুমাত্র ওয়ারিশগনদের জন্য বাধ্যতামূলক)।
• জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত) (বাধ্যতামূলক)।
• বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তারপর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)।
• চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্যকৃত ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)।
• আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)।
• উপরোক্ত নথিপত্র অনলাইনে আবেদন করার আগেই স্ক্যান করে নিতে হবে। স্ক্যান ফাইল অবশ্যই JPG, PNG অথবা PDF ফরমেটে হতে হবে।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত কাগজপত্রের সবগুলিই যে আপনার জন্য প্রয়োজন হবে, তা নাও হতে পারে। কোনভাবে আপনি মালিকানা লাভ করেছেন তার উপর নির্ভর করবে কোন কোন সংযুক্তি আপনার প্রয়োজন হবে।
নামজারি অনলাইন খতিয়ান
যেহেতু ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করতে হবে তাই কম্পিউটার/ল্যাপটপ কিংবা অন্য যে কোন স্মার্ট ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
প্রথমে যে কোন একটি ইন্টানেট ব্রাউজার (ক্রম, মজিলা) ওপেন করুন। এরপর এড্রেসবারে টাইপ করুন https://mutation.land.gov.bd/ নিচের মত পেজ ওপেন হবে।
ই নামজারি আবেদন
অনলাইনে আবেদন করুন ট্যাবে নিচের দিকে লাল মার্ক করা বাটনটি ক্লিক করুন। আপনাকে নামজারি জন্য আবেদন করার ফরমে নিয়ে যাওয়া হবে। নিচের মত আবেদন ফরম ওপেন হবে। লাল মার্ক করার ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
![]() |
| অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation |
নামজারি আবেদন ফরম
আবেদন ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে জরুরী বিষয়
জমি খারিজ বা অনলাইনে নামজারির আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আপনার জনা জরুরী। যেমন আপনি যদি কারো প্রতিনিধি হিসাবে আবেদন করেন তাহলে আবেদন কারীর তথ্য ঘরের নিচে একটি ঘর রয়েছে।
আবেদনকারী নিজে না হয়ে প্রতিনিধি হলে এখানে ক্লিক করুন ঘরে টিক মার্ক দিন। আপনার আবেদনটি জরুরী হয়ে থাকলে জরুরী কিন? টিক মার্ক দিন।
নথিপত্র আপলোড করার ক্ষেত্রে, এক এক করে আপলোড করতে হবে। নথিটি আপলোড হলে এটি কি ধরণের নথি (দলিল/খতিয়ান/ নাগরিক সনদ) ড্রপডাউন মেনু থেকে সিলেক্ট করে দিতে হবে।
সবকিছু হয়ে গেলে নিচের “দাখিল” বাটনটি ক্লিক করুন। তাহলে আপনার আবেনদটি সাবমিট হবে। আবেদনটি সাবমিট হলে আপনি একটি আইডি নাম্বার পাবেন। এই আইডি নাম্বার দিয়ে আবেদনের অবস্থা জানতে পারবেন।
ই নামজারি ফি বা নামজারি করতে কত টাকা লাগে
আপনি যখন অনলাইনে নামজারির আবেদন করবেন তখনই নামজারি ফি এর কিছু অংশ পরিশোধ করতে হবে এবং আপনার আবেদন অনুমোদন হয়ে গেলে বাকী অংশ অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
প্রথমে যখন আপনি ই নামজারি আবেদন করবেন প্রথমেই কোর্ট ফি বাবদ ২০ টাকা এবং নোটিশ জারি ফি বাবদ ৫০ টাকা মোট ৭০ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
এরপর আবেদন অনুমোদন হলে রেকর্ড সংশোধন বা হালনাগাদ ফি বাবদ ১০০০/- ( এক হাজার টাকা) এবং প্রতি খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ ১০০/- (একশত) টাকা অনলাইনে জমা দিতে হবে।
ফি পরিশোধ হয়ে গেলে অনলাইন থেকে কিউআর কোডযুক্ত (কুইক রেসপন্স কোড)) অনলাইন ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) সংগ্রহ করতে পারবেন।
ই নামজারি যাচাই বা চেক করার নিয়ম
আপনার আবেদন কি অবস্থায় রয়েছে বা কতদূর অগ্রগতি তা অনলাইনে জানতে পারবেন। আবেদনটি বাতিল হয়ে গেলেও কি কি কারণে বাতিল করা হয়েছে তা আপনাকে জানানো হবে।
বর্তমানে আপনার নামজারি আবেদনটি কি অবস্থায় আছে তা জানার জন্য ই নামজারি ওয়েবসাইটের হোম পেজে যান।
নিচের মত ফরমটি পূরন করে নিচে খুজুন বাটনটি ক্লিক করুন।
![]() |
| অনলাইনে নামজারি করার নিয়ম । ই নামজারি | খারিজ | e mutation |
ই নামজারি বা জমি খারিজ আবেদন ট্রাকিং ফরম
আপনার বিভাগ, আবেদন আইডি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নাম্বার এবং নিচের ঘরে পাশের শর্তমত যোগফল বা বিয়োগফল লিখুন। এখন সার্চ করলে আপনার আবেদনটির সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।
নামজারি আবেদনের পর শুনানিতে অংশগ্রহণ
আপনার নামজারি আবেদন অনুমোদন হলে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে যে কোন ভুমি মামলার শুনানি অনলাইনে অংশগ্রহণ করা যায়।
নামজারি বা মিউটেশনের সুবিধা
নামজারি করার মাধ্যমে সাবেক মালিকের পরিবর্তে নতুন মালিকের নাম রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকে বলে সাবেক মালিক প্রতারণার মাধ্যমে একই জমি একাধিকবার বিক্রয় করতে পারে না। যার কারণে জমি নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটে।
নতুন মালিকের নিজ নামে স্বতন্ত্র খতিয়ান সৃষ্টি হওয়ার ফলে জমির মালিকানার প্রমাণ হিসেবে সর্বক্ষেত্রে এই খতিয়ান গ্রহণযোগ্য হয়।
পাশাপাশি খারিজ খতিয়ানের উপর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যায়। এবং এই দাখিলা সহজে ভূমির মালিকানা ও দখল প্রমাণ করে।
গৃহ নির্মাণ, ব্যাংক ঋণ, জমি বিক্রয় প্রভৃতি কাজের জন্য নামজারি ও জমাখারিজ অধিকতর কাজে আসে। সহজে ভূমির মালিকানা প্রমাণের জন্য নামজারির বিকল্প নেই।
নামজারি না করলে অসুবিধা
সঠিক সময়ে নামজারি বা মিউটেশন না করলে বিক্রেতা বা পূর্বের মালিক একই জমি একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করার সুযোগ পায় যার কারণে পরবর্তীতে নানান আইনি জটিলতার সৃষ্টি করে।
যৌথ খতিয়ানের জমির দখল নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। নামজারি করা না হলে নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যায় না।


