বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি। বেগুন চাষ পদ্ধতি। বেগুন গাছের যত্ন ও পরিচর্যা। begun chas
বেগুন চাষ পদ্ধতি
ডেস্ক প্রতিবেদন, ekrishi24: বেগুন সবজি হিসেবে সুস্বাদু। আমাদের অনেকেরই বেগুন চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা নেই। সঠিক নিয়মে বেগুনের চাষ না করায় অনেকেই আবার লোকসান করে থাকেন। আর এজন্যই বেগুনের ফলন নিয়ে চাষিরা হতাশ হন। বেগুনের অধিক ফলন পেতে হলেন সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি। বেগুন চাষ পদ্ধতি। বেগুন গাছের যত্ন ও পরিচর্যা। begun chas
|
| বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি। বেগুন চাষ পদ্ধতি। |
বেগুন চাষের উপযুক্ত মাটিঃ
সব মাটিতেই বেগুন জন্মে। বেগুন চাষের ক্ষেত্রে এটেল দো-আঁশ, দো-আঁশ ও পলি মাটিতে বেগুনের ফলন ভাল হয়ে থাকে।বেগুন চাষের জন্য উপযোগী জলবায়ুঃ
বেগুন সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভাল ফলন দিয়ে থাকে। তাপমাত্র এর কমবেশি হলে বেগুনের ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের জন্য শীতকালীন জলবায়ু বেগুন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।বেগুনের চারা রোপণের সময়/মৌসুমঃ
সাধারণত বেগুনের চারা মাঘ-ফাল্গুন মাসে গ্রীষ্মকালীন, বৈশাখ মাসে বর্ষাকালীন, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে শীতকালীন ফসলের জন্য রোপণ করা হয়ে থাকে।বেগুনের চারার বীজতলা তৈরিঃ
বীজতলা তৈরির জন্য মাটি গভীরভাবে অর্থাৎ অন্তত ২০ সেন্টিমিটার চাষ দিতে হবে। বীজতলায় মাটি হতে হবে উর্বর। উর্বরতা কম থাকলে জৈব সার ও সামান্য পরিমাণ ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি বর্গ মিটার বীজতলার জন্য ০.১০ ঘন মিটার পচা গোবর সার ও ৩০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে। চাষের পর সম্পূর্ণ জমিকে কয়েকটি ছোট ছোট বীজতলাতে ভাগ করে নিতে হবে।
প্রতিটি বীজতলার দৈর্ঘ্যে ৩-৫ মিটার, প্রস্ত ১ মিটার ও পাশ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার
ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত। পাশাপাশি দুটো বীজতলার মধ্যে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার জায়গা
ফাঁকা রাখাতে হবে।
বেগুনের বীজতলায় বীজ বপনঃ
বেগুন চাষের জন্য প্রথমে ২৫ গ্রাম বীজ ৩ বর্গ মি. বীজতলায় বুনতে হয়। বীজতলায় ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায় ভাইরাস রোধ করা যায়। এবং বীজতলা এমন স্থানে তৈরী করতে হবে যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়াবে না অর্থাৎ সুনিষ্কাশিত হতে হবে, সর্বদা আলো-বাতাস পায় এবং ছায়ামুক্ত হতে হয়। বীজতলায় চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় লাগাতে হয়।বেগুনের চারা রোপণঃ
প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে নিন। তারপর বেগুনের চারার বয়স যখন ৩৫-৪৫ দিন অর্থাৎ ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের তখনই চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে ৫-৬টি পাতা থাকে এবং ১৫ সে.মি লম্বা হয়। বেগুনের চারা ২ মাস পর্যন্ত বীজতলায় রেখে দেওয়া যায়। বীজতলা থেকে চারা চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয সেজন্য চারা তোলার ১-২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।বেগুনের চারা রোপণ দূরত্বঃ
বেগুনের চারা জাতের ক্ষেত্রে ও চারার আকার অনুযায়ী দুরত্ব বজায় রেখে লাগাতে হয়। বড় জাতের বেগুনের জন্য ৭৫ সে.মি থেকে ৯০ সে.মি দুরে সারি করে ৫০-৬০ সে.মি দুরে দুরে লাগাতে হয়। তবে বেগুনের চারার আকার অনুযায়ী দূরত্ব ১০-১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি করা যায়। চারা লাগানের সঠিক সময় হলো বিকালের সময়। চারা রোপনের পর সেচ দিতে হবে যাতে করে চারা শুকিয়ে না যায়।বেগুন চাষে জমিতে কি সার দিবেন?
বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে। সারের পরিমাণ মাটির উর্বরতা শক্তির উপর নির্ভর করে এবং জাতের ফলন ক্ষমতা ও অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার ও চুন প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বেগুন চাষের জন্য শতক হিসেবে নিম্ন লিখিত পরিমাণে সার সুপারিশ করা যেতে পারে।প্রথম জমি চাষে ৩ কেজি ঢলো চুন। ২য় চাষে ১০০ কেজি গোবর। ৩য় চাষে যা যা দিবেন- ১ কেজি টি.এস.পি, ১ কেজি খইল, ৫০০ গ্রাম জিপসাম, ৭০ গ্রাম বোরন, ১০০ গ্রাম ভালো কোম্পানির দানাদার কীটনাশক, ১৫০ গ্রাম পটাশ সার সহ সব উপকরণ ভালো করে মিক্সড করে জমিতে প্রয়োগ করে চাষ দিয়ে ৪ দিন রেখে দিবেন। বেগুনের জাত ভেদে বেড প্রস্তুত করতে হবে।
প্রথম কিস্তি সার চারা লাগানোর ১০-২৫ দিন পর,
দ্বিতীয় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে।
জমিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে।
বেগুনের পোকা ও রোগঃ
বেগুনের যে সকল পোকা ও রোগ বেশি হয় তার নিম্নে আলোচনা করা হল।বেগুনের পোকা
মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড এবং বেগুনের ডগা,কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা।বেগুনের রোগ
গোড়া পচা, ক্ষুদে পাতা ও ডেম্পিং অফ বা চারা ধ্বসা/ঢলে পড়া রোগ।সেচ ও পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থাঃ
বেগুন গাছের প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই বেলে মাটিতে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হয়। তাছাড়া জমিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে বেগুনের জমিতে পানি নিষ্কাসনের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ বেগুন গাছ দাঁড়াণো পানি সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত পানির কারণে যাতে বেগুন গাছের গোঁড়া পচে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।বেগুন চাষে আগাছা দমনঃ
গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাজে আলগা করে দিতে হবে। কোন ভাবেই জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবেনা। আগাছা দেখাদিলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে।বেগুন সংগ্রহঃ
খাওয়ার উপযোগী বেগুন ক্ষেত থেকে তোলার সময় সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে বা ক্ষত সৃষ্টি না হয়। গাছ থেকে তোলা বেগুন কাঁচা পাতায় অথবা খড়ের উপর রাখতে হবে যেন বেগুনে আঘাত না লাগে,এটা অতি প্রয়োজনীয়। সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত ফুল ফোটার পর থেকে ফল পেতে ১ মাস সময় লাগে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।বীজ উৎপাদনে করণীয়ঃ
পরিপক্ব ফল হলদে হলে সংগ্রহ করা উচিত। সপ্তাহপর ফলের চামড়া ছিলে বীজসহ মাংসল অংশ কেটে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮% হতে হবে।নোটঃ বেগুন চাষীদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো বেগুন গাছের গোড়া পচে যাওয়া ও গাছ মড়ে যাওয়া।এই রোগটি যে কোন বয়সের গাছে হতে পারে। বেগুন ছায়ায় রাখলে গরমকালে ১-৩ দিন ও শীতে ৩-৫ দিন সতেজ থাকে। ১৩ সেন্ট্রিগ্রেড তাপে ও ৯০% আর্দ্রতায় ২৫ দিন রাখা যায়।
