তিসি চাষাবাদ
তিসি চাষাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
সনাক্তকরণ
ফসলের নাম– তিসি (Linseed)
উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম: Linum Utitatissimum Linn.
পরিবার: Linaceae.
বৈশিষ্ট্য
তিসি থেকে তেল এবং আঁশ পাওয়া যায়। তেল ফসল হিসেবে জমির পরিমানের দিক থেকে সরিষা, তিল এবং সয়াবিনের পরই তিসির স্থান।
তিসি গাছ ৩০ থেকে ৮০ সেমি উঁচু হয়; এর মূল কান্ড স্পষ্ট এবং শিকড় খাড়া। প্রতি ফুলে নীল, সাদা অথবা হালকা গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে, পরাগধানী থাকে দশটি যা নীল অথবা হলুদ। ভোর বেলায় ফুল ফোটে এবং বিকেলে পাপড়ি ঝরে যায়। চকচকে, উজ্জ্বল চ্যাপটা বীজ বাদামি অথবা হলুদ রঙের, প্রায় এক সেমি লম্বা। কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি করা হয়।
প্রতিটি শুঁটিতে ৪০-৫০টি হালকা বাদামি, চ্যাপটা, ডিম্বাকার, চকচকে ও মসৃণ বীজ হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন তেলের রং হলুদ থেকে বাদামি। বাংলাদেশে রবি শস্য হিসেবে তিসি চাষের প্রধান এলাকা খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলা। চাষাধীন জমি প্রায় ৪,৭৭১ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপন্ন বীজ প্রায় ২,৯৭০ মে টন। বীজ থেকে ৩০-৩৮% তেল ও প্রায় ২০% প্রোটিন পাওয়া যায়। বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদির উপাদান হিসেবে তিসির তেল ব্যবহার হয়। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ায় ও ছাপাখানার কালিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে আঁশ হিসেবে তিসির তেমন ব্যবহার নেই।
জাত পরিচিতিঃ নীলা (লিন-১)
জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো-বীজ ছোট ও চেপ্টা। ফল ১০০০ বীজের ওজন ৩.০-৩.৫ গ্রাম। ফুলের রং নীল। বীজ হাতে ধরলে পিচ্ছিল অনুভূত হয়। বীজে তেলের রিমাণ শতকরা ৩৮ ভাগ। হেক্টর প্রতি ফলন ৮৫০-৯৫০ কেজি।
পুষ্টিমূল্য/উপাদানঃ প্রোটিন, তেল, কার্বোহাইড্রেট, ছাই, আঁশ বিদ্যমান।
ব্যবহারঃ যন্ত্রপাতির জন্য গ্রিজ ও সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
মাটিঃ
এঁটেল মাটি তিসি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পলি দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে তিসির চাষ করা যায়।
জমি তৈরিঃ
তিসির বীজ ছোট বলে জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও ২-৩টি মই দিয়ে মসৃণ ভাবে জমি তৈরি করতে হয়।
সারের পরিমাণঃ
সাধারণত তিসি বিনা সারে চাষ করা হয়। তবে ভাল ফলন পেতে হলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়।
| সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
|---|---|
| ইউরিয়া | ৭০-৮০ কেজি |
| টিএসপি | ১১০-১৩০ কেজি |
| এমওপি | ৪০-৫০ কেজি |
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
ইউরিয়া সার এর অর্ধেক ও বাকি অন্যসব সার শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
বপনের সময়ঃ
কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর হতে মধ্য-নভেম্বর)।
বীজের হারঃ
৭-৮ কেজি/হেক্টর ।
বপন পদ্ধতিঃ
তিসি সাধারণত ছিটিয়ে বপন করতে হয়। তবে সারিতে বপন করা ভাল। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হয়।
পরিচর্যাঃ
জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনমত ১-২ বার সেচ দিলে ফলন ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহঃ
ফসল পরিপক্ক হওয়ার সময় গাছ ও ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। এমন হলে ফসল কেটে মাড়াই করে এবং রোদে শুকিয়ে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
ফসল তোলাঃ
তিসি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাকে। পাকলে গাছ এবং ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। ফল ভালভাবে পাকার পরই গাছ কাটা বা উপড়ানো উচিৎ। ফসল কেটে বা উপড়িয়ে নেয়ার পর গাছগুলো ছোট ছোট আঁটি বেঁধে বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে রাখা যায়। জীবনকাল ১০০-১১৫ দিন।
