রসুন চাষাবাদ
রসুন চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
বাংলা নামঃরসুন
ইংরেজী নামঃ Garlic
বৈজ্ঞানিক নামঃ Allium Sativum Linn
জগঃPlantae
বিভাগঃMagnoliophyta
শ্রেণীঃLiliopsida
বর্গঃAsparagales
পরিবারঃঃAlliaceae
উপপরিবারঃAllioideae
গোত্রঃAllieae
গণঃAlium
প্রজাতিঃA. sativum
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশে রসুন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে রসুনের চাষ সাধারণত রবি মৌসুমে সীমাবদ্ধ। শাক-সব্জি, মাংস প্রভৃতি রান্নার কাজে এবং আচার, চাটনি প্রস্তুতে রসুন প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। খাদ্য ছাড়াও রসুন অনেক ঔষধী গুণে গুণান্বিত।
জাতঃ
বারি রসুন- ১, বারি রসুন- ২, বাউ রসুন- ২ ইত্যাদি।
সেচঃ
রসুনের কোয়া লাগিয়েই একবার সেচ দেওয়া হয়। চারা একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে ১০-১৫ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। রসুনের জমিতে বিশেষ করে কন্দ গঠনের সময় উপযুক্ত পরিমানে রস থাকা দরকার। সেচ এবং বেশী দিন দীর্ঘ দিবসের অভাবে আমাদের দেশে রসুনের ফলন কম হয়। রসুনের ক্ষেতে মাটির চটা বাঁধা কন্দের বৃদ্ধির পরিপন্থি। পানি সেচের পর মাটির জো আসার সাথে সাথে চটা ভেঙ্গে এবং সেই সাথে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে। রসুন কোনো অবস্থাতে পানিবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সুতরাং জমিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেচ প্রয়োগের ৩০-৬০ মিনিট পর সেচ নালা খুলে দিতে হবে। পানি সেচ অবশ্যই ফসল উত্তোলনের ৩ সপ্তাহ পূর্ব থেকে বন্ধ রাখতে হবে।
ফসল তোলাঃ
রসুন রোপণের ৪-৫ মাস পর পাতার অগ্রভাগ হলদে বা বাদামী হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকলে বুঝতে হবে রসুন পরিপক্ব হয়েছে । এক্ষেত্রে কন্দের বাইরের দিকে কোয়াগুলি পুষ্ট হয়ে লম্বালম্বি ফুলে উঠে এবং দুইটি কোয়ার মাঝে খাঁজ দেখা যায়। হাত দিয়ে গাছ টেনে তুলে মাটি ঝেড়ে পরিস্কার করা হয়। এর পর কন্দগুলি ৩-৪ দিন ছায়ায় রেখে শুকানো হয়। তারপর কন্দ থেকে কান্ড কেটে গুদামজাত করা হয়।
ফলনঃ
আমাদের দেশে জাতীয় গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬.৭৪ মেট্রিক টন (ডিএই, ২০১৫-১৬)।
সংরক্ষণঃ
ভালভাবে শুকানো রসুন আলো-বাতাস চলাচলযুক্ত ঘরের শুকনা মেঝেতে বা মাচায় সহজেই ৫-৬ মাস রাখা যেতে পারে। বেনী বেধে ঝুলিয়ে রাখলে রসুনের গুনাগুণ ও মান ভালো থাকে।
সারের পরিমান ও সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-৩
প্রতি হেক্টর জমিতে উপরি প্রয়োগ হিসেবে দ্বিতীয় কিস্তি (৫৪ কেজি ইউরিয়া ও ৮৩ কেজি এমওপি) সার রসুন বপনের ৫০ দিন পর দিতে হবে।
সারের পরিমান ও সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-২
প্রতি হেক্টর জমিতে উপরি প্রয়োগ হিসেবে বাকি ইউরিয়া (১০৮ কেজি) ও এমওপি (১৬৬ কেজি) সার দুই কিস্তিতে সমান ভাগ করে প্রথম কিস্তি (৫৪ কেজি ইউরিয়া ও ৮৩ কেজি এমওপি) রসুন বপনের ২৫ দিন পর দিতে হবে ।
পরবর্তী পরিচর্যাঃ
রসুনের চারা যখন বড় হতে থাকে তখন জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে। কন্দ গঠনের আগ পর্যন্ত ২-৩ টি নিড়ানি দিয়ে, আগাছা পরিস্কার ও মাটি আলগা করে দেওয়া উচিত। রসুনের জমিতে হাল্কাভাবে নিড়ানি দেওয়া প্রয়োজন, যাতে শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
বীজের হারঃ
বীজ হিসাবে রসুনের কোয়া ব্যবহৃত হয়। পূর্ববর্তী বছরের উৎকৃষ্ট ফসল থেকে বড় বড় কন্দ বেছে নিয়ে তার কোয়া ব্যবহার করা হয়। কোয়ার ওজন ০.৭৫ থেকে ১.০ গ্রাম। কোয়ার আকার অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ৪০০-৫০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
জলবায়ুঃ
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে রসুন ভাল জন্মে। ঠান্ডা আবহাওয়া রসুন চাষের পক্ষে অনুকূল। রসুন লাগানোর পর অতিরিক্ত গরম, মেঘলা আবহাওয়া বা বেশী বৃষ্টিপাত হলে কন্দ ভালোভাবে গঠিত হয় না। অধিক বৃষ্টিপাত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় রোগ বালাই ও পোকামাকড় এর আনাগোনা বৃদ্ধি পায় যা কন্দ উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। রসুন গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং বাল্ব পরিপক্ব হওয়ার জন্য বড় দিন ও শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।
মাটিঃ
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটিতে রসুন ভাল জন্মে। এঁটেল বা এঁটেল দো-আঁশ মাটিতেও এর চাষ হতে দেখা যায়। এঁটেল মাটির কন্দ সুগঠিত হয় না এবং ফসল তোলার সময় অনেক কন্দ থেৎলে যায় বলে বেশীদিন ঘরে রাখা যায় না। মাটির অম্লমান ৫.২-৬.৮ হলে রসুনের ভালো ফলন হয়। বালি মাটিতে রসুন খুব একটা ভাল হয়না। উচ্চক্ষারীয় লবনাক্ত মাটি রসুনের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
জমি তৈরীঃ
রসুনের জমি ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করা দরকার। পূর্ববর্তী ফসল তোলার পর ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বেছে ও ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরে করা হয়।
সারের পরিমান ও সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-১
হালকা দোঁ-আশ মাটিতে উপযুক্ত জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে রসুনের কন্দের আকার ও ফলন ভাল হয় এবং সেগুলো অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। রসুন চাষে প্রতি হেক্টরে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
| সার | মোট পরিমাণ | শেষ চাষের সময় দেয় | উপরি সার প্রয়োগ | ||
|---|---|---|---|---|---|
| ১ম কিস্তি (২৫দিন পর) |
২য় কিস্তি (৫০ দিন পর) |
||||
| গোবর/কম্পোস্ট | ৫ টন | সব | - | - | |
| ইউরিয়া | ২১৭ কেজি | ১০৯ কেজি | ৫৪ কেজি | ৫৪ কেজি | |
| টিএসপি | ২৬৭ কেজি | সব | - | - | |
| এমওপি | ৩৩০ কেজি | ১৬৭ কেজি | ৮৩ কজি | ৮৩ কেজি | |
সম্পূর্ণ গোবর , টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া (১০৯ কেজি) ও অর্ধেক এমওপি (১৬৭ কেজি) শেষ চাষের সময় দিতে হবে ।
রোপণ সময়ঃ
সমতল ভূমিতে ১৫ই অক্টোবর- ১৫ই নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে রসুনের কোয়া রোপণ করতে হয়।
রোপণ পদ্ধতিঃ
(ক) ফারো পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ চাষকৃত দোঁ-আশ মাটিতে লাঙ্গল দিয়ে সোজা নালা তৈরি করে কোয়া রোপন করা হয়। ফারো রোপন পদ্ধতি রসুন চাষের জন্য ভাল। একটি আদর্শ ৪ মিটার লম্বা এবং ১.৫ মিটার প্রস্থের তৈরিকৃত ব্লকে রো কোদাল দিয়ে ২.৫-৩.০ সে.মি. গভীরে নালা করে ১০ সে.মি. অন্তর সারি করে, প্রতি সারিতে ৭ সে.মি. দূরে রসুনের কোয়া লাগানো হয়।
এ পদ্ধতিতে সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ চাষকৃত দোঁ-আশ মাটিতে লাঙ্গল দিয়ে সোজা নালা তৈরি করে কোয়া রোপন করা হয়। ফারো রোপন পদ্ধতি রসুন চাষের জন্য ভাল। একটি আদর্শ ৪ মিটার লম্বা এবং ১.৫ মিটার প্রস্থের তৈরিকৃত ব্লকে রো কোদাল দিয়ে ২.৫-৩.০ সে.মি. গভীরে নালা করে ১০ সে.মি. অন্তর সারি করে, প্রতি সারিতে ৭ সে.মি. দূরে রসুনের কোয়া লাগানো হয়।
(খ) ডিবলিং পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে নরম মাটিতে সুতা দিয়ে লাইন করে কোয়া মাটিতে পুতে দেওয়া হয়।
১)জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি একেবারে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বীজ বপনের আগে জমিতে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।
২)কোয়াগুলো হাতের দু´ আঙ্গুলে ধরে ১৫ সে. মি. দুরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ১০ সে.মি. দুরে দুরে ৩-৪ সে.মি. মাটির গভীরে রোপন করতে হবে।
৩) মাঝারী থেকে বড় সাইজের কোয়া রোপনের জন্য ব্যবহার করতে হবে। সমস্ত জমি প্রায় ৭ সে.মি. পুরু খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বীজ বপনঃ- শুকনো রসুনের বাহিরের সারির কোয়া লাগানো হয়। ১৫ সে.মি. দূরত্বে সারি করে ১০ সে.মি. দূরে ৩-৪ সে.মি. গভীরে রসুনের কোয়া লাগানো হয়। প্রতি হেক্টরে ৩০০-৩৫০ কেজি বীজ রসুনের প্রয়োজন হয়।
