বালাইনাশক ব্যবহারে সতর্কতা |কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক
বালাইনাশক ব্যবহারে সতর্কতা মূলক পরিচিতি
বালাইনাশক মূলতঃ
এক প্রকার বিষ যা ব্যবহূত হয় ফসলের পোকা-মাকড়, জীবাণু, আগাছা ও ইঁদুর মারার জন্য। বিভিন্ন প্রকার পেস্টিসাইডের মধ্যে রয়েছে ইনসেক্টিসাইড বা কীটনাশক, ফানজিসাইড বা ছত্রাকনাশক, উইডিসাইড বা আগাছানাশক, মাইটিসাইড বা মাকড়সানাশক এবং রোডেন্টিসাইড বা রোডেন্ট পেস্ট অর্থাত্ ইঁদুর মারার বিষ। সব ধরনের বালাই বা আপদ ফসল উৎপাদনে নানা রকম ক্ষতি করে থাকে। আর এ ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকরা বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড ব্যবহার করে।
উচ্চমূল্যের ফসলকে রক্ষা করার জন্য কৃষকদের বালাইনাশকের ইচ্ছেমত ব্যবহার ফসলকে রক্ষা করলেও একদিকে ফসলের উত্পাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দীর্ঘদিন একই বালাইনাশক ব্যবহার করার ফলে দিন দিন ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও জীবাণু বালাইনাশক প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে। তাই বালাইনাশক ব্যবহারে কিছু নিয়ম-কানুন ও সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
|
| বালাইনাশক ব্যবহারে সতর্কতা |
বালাইনাশক ব্যবহারের মূলনীতিঃ
বালাইনাশক ব্যবহারের মূলনীতি হলো সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা। বালাইনাশক ব্যবহারের সময় অবশ্যই বালাইনাশক ব্যবহারের সতর্কতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
বালাইনাশক ব্যবহারের কুফলঃ
অধিক উৎপাদনের জন্য কৃষিজমিতে কীটনাশক ব্যবহারের পর কিছু কিছু কীটনাশক পাইরিথ্রয়েড ও কার্বামেট অল্প দিনের মধ্যে তাদের কার্যকারিতা হারালেও অধিকাংশ কীটনাশকে বিশেষ করে অর্গানোক্লোরিন ও অর্গানোফসফেট পুঞ্জীভূত কার্যকারিতা বছরের পর বছর মাটিতে থেকে যায়। এ ছাড়া একটি কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তা দ্বারা শস্যের নির্দিষ্ট পোকা ছাড়াও মাটিতে বিদ্যমান অন্যান্য প্রায় সব জীব মারা যায়। ফলে পরিবেশ ক্রমেই তার জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে এবং ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। আর জীববৈচিত্র্য আর ভারসাম্যহীনতা হারিয়ে আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছি আমরা কি তা টের পাচ্ছি? সাবধান, সচেতন হওয়ার সময় এখনো আছে।
যদি সময়মতো সচেতন আমরা না হই, তাহলে এ উদাসীনতা আমাদের অনেক ক্ষতি করে ফেলবে। তখন আর আমরা কূল পাব না। এসব কীটনাশক বলি আর বালাইনাশক বলি এদের বিষাক্ত প্রভাবে এরই মধ্যে দেশের জনগণের মধ্যে চর্মরোগ, বুদ্ধিহীনতা, বন্ধাত্ব, হৃদরোগ, খিঁচুনি, রক্তচাপসহ আরো অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
১। বালাইনাশক ব্যবহারের আগে বোতলের গায়ের লেবেল ভাল করে পড়ুন আর নির্দেশাবলি মেনে চলুন।
২। নিরাপত্তা মূলক পোষাক পরিধান করুন। মুখ, চোখ গামছা বা গেঞ্জি দিয়ে ঢেকে রাখুন।
৩। নজেল পরিষ্কার করতে গিয়ে মুখ দিয়ে ফু দিবেন না। বালাইনাশক ছিটানোর সময় ধূমপান বা পানাহার থেকে বিরত থাকুন।
৪। বাতসের বিপরীতে কখনোই স্প্রে করবেন না। স্প্রের সময় টুপি এবং শ্লিড ব্যবহার করুন।
৫। বালাইনাশক ব্যবহার করা স্থানে সাইনবোর্ড বা লাল কাপড় বা বালাইনাশকের পাত্র টাংগীয়ে দিন।
৬। জলাশয়ে বালাইনাশকের বোতল বা ব্যবহূত সেপ্রয়ার ধোবেন না।
৭। জলাশয় থেকে দূরে কোনো নিরাপদ স্থানে আপনার সেপ্রয়ার ও ব্যবহূত কাপড় ধুয়ে ফেলুন।
৮। ব্যবহূত বালাইনাশকের বোতল ও প্যাকেট ভেঙে ও ছিঁড়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন।
৯। ফুটো বা চুইয়ে পড়ে এমন ত্রুটিপূর্ণ সেপ্র মেশিন ব্যবহার করবেন না।
১০। বালাইনাশকের বোতল বা পাত্রে অন্য কোনো জিনিস রাখবেন না।
১১। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মিশে তা লক্ষ্য রাখুন।
১২। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমিতে যেন হাঁস-মুরগি বা গবাদি পশু না প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
১৩।বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ২ থেকে ৭ দিন পর বাজারজাত করুন।
১৪। বালাইনাশক আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিন এবং ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
১৫। বালাইনাশক খেয়ে ফেললে সাথে সাথে বমি করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।
১৬।বালাইনাশক শিশুদের নাগালের বাইরে তালা-চাবি দিয়ে রাখুন।
১৭।মেয়াদত্তীর্ণ বালাইনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
