ব্রি হাইব্রিড ধান ২
জাত পরিচিতি ব্রি হাইব্রিড ধান ২ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
বােরাে মৌসুমে চাষ উপযােগী ব্রি উদ্ভাবিত একটি হাইব্রিড ধান। ইহার কৌলিক সারি বিআর১০এইচ। জাতটি ২০০৮ সালে জাতীয় বীজবাের্ড কর্তৃক অনুমােদন লাভ করে।
|
| ব্রি হাইব্রিড ধান ২ জাত পরিচিতি |
➤জাতের বৈশিষ্ট্য
⊕ গছের উচ্চতা ১০৫ সেমি।
⊕এর কান্ড ও পাতা ঘন সবুজ এবং খাড়।
⊕ চাল মাঝারি মােটা এবং ভাতয়রঝরে।
⊕ এ জাতের চালে৯.০% প্রােটিন ও ২৩.৩% এমাইলােজ রয়েছে।
➤জীবনকাল
এ জাতটির জীবনকাল ১৪৫ দিন।
➤ফলন
এ জাতের গড় ফলন ৮.০ টন/হেক্টর।
✔✔ব্রি হাইব্রিড ধান চাষাবাদ পদ্ধতি
☞বীজতলায় বীজ বপন:
১-৩০ অগ্রাহায়ণ (১৫ নভেম্বর-১৫ ডিসেম্বর)।
☞ চারা রােপণ:
১-৩০ পৌষ (১৫ ডিসেম্বর-১৫ জানুয়ারি)।
☞বীজের হার:
১৫-২০ কেজি/হেক্টর।
☞ চারার বয়সঃ
৩০-৩৫ দিনের চারা।
☞রােপণ দূরত্ব:
২০x১৫ সেন্টিমিটার।
☞প্রতি গােছায় চারা:
১-২ টি।
☞♥সার ব্যবস্থাপনা (কেজি/বিঘা):
ইউরিয়া ৩৬ kg, টিএসপি ১৭ kg, এমপি ১৬ kg, জিপসাম ৯ kg, দস্তা ১ kg সার প্রয়োগ করতে হবে।
♥১ম কিস্তি
জমি তৈরির সময় ইউরিয়া১২ kg, টিএসপি ১৭ kg, এমপি ১১ kg, জিপসাম ৯ kf, দস্তা ১ kg প্রয়ােগ করতে হবে।
♥২য় কিস্তি
চারা রােপণের ১৫-২০ দিন
পর ইউরিয়া ১২, এবং এমপি ৫ প্রয়ােগ করতে
হবে।
♥ ৩য় কিস্তি
সবশেষে চারা রােপণের ৪০-৪৫ দিন পর ১২
কেজি ইউরিয়া প্রয়ােগ করেত হবে।
♥ ইউরিয়া সার সমান ৩ ভাগে ভাগ করে ১ম কিস্তি জমি তৈরির সময়, ২য় কিস্তি চারা রােপণের ১৫-২০ দিন পর এবং ৩য় কিস্তি চারা রােপনের ৪০-৪৫ দিন পর উপরি প্রয়ােগ করতে হবে। তবে এলসিসি ভিত্তিক ইউরিয়া প্রয়ােগ করাই উত্তম।
➤আগাছা দমনঃ
রােপণের ৪৫ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
➤সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
ধানের দুধ অবস্থা পর্যন্ত জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
➤রােগ বালাই দমনঃ
অনুমােদিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে।
➤ফসল কাটাঃ
২৫ চৈত্র - ৫বৈশাখ (৮-১৮ এপ্রিল) ৮০% ধান পেকে গেলে কাটতে হবে।
✔✔ব্রি হাইব্রিড ধান ২ জাত পরিচিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
➤জাত নির্বাচনঃ
বোরো মৌসুমের জাতগুলোতে কোন আলোক সংবেদনশীলতা নেই। এ মৌসুম শুরু হয় ঠাণ্ডা ও ছোট দিন দিয়ে, আর ফুল ফোটে গরমের শুরুতে এবং বড় দিনে। তাই আলোক সংবেদনশীল কোন জাত বোরো মৌসুমে আবাদ করা উচিত নয়। বোরো মৌসুমের যে সমস্ত জাতের জীবনকাল ১৫০ দিন বা তার চেয়ে কম সেগুলোর বীজ বপন করতে হবে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে এবং যে জাতগুলোর জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশী সেগুলো ১৫ কার্তিক থেকে বীজ বপন করা যাবে। এ সময় বীজ বপন করলে চারার উচ্চতা ভেদে ৩৫-৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
বোরো ধানের রোপণ ১৫ মাঘের মধ্যে শেষ করা উচিত। এরপর রোপণ করলে জীবনকাল ও ফলন উভয়ই কমে যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় ১৫-৩০ কার্তিকের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
➤বীজ বাছাইঃ
বপনের জন্য পুষ্ট ও সুস্থ বীজ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা। বিভিন্ন পদ্ধতিতে (হাত বা কুলা দিয়ে, ইউরিয়া মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে) বীজ বাছাই করা যায়। বীজ বাছাইয়ের একটি ভালো পদ্ধতি হলো-
দশ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মেশাতে হবে। এবার ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিতে হবে। পুষ্ট বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট, হালকা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মেশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়। বপনের আগে বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো। প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম ভিটাভেক্স- ২০০ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকানি রোগপ্রবণ এলাকায় আবশ্যিক ভাবে ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
➤আদর্শ বীজতলা তৈরীঃ
দোআঁশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার জন্য ভাল। বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি অনুর্বর হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পঁচা গোবর বা আর্বজনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেমি পানি দিয়ে দু তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা, খড় ইত্যাদি পঁচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। বীজতলা তৈরির ৩/৪ ঘন্টা পর বীজ বোনা উচিত। একটি আদর্শ বীজতলার চিত্র নিম্নে দেওয়া হলো।
➤বীজ বপনঃ
বোরো মৌসুমের যে সমস্ত জাতের জীবনকাল ১৫০ দিন বা তার চেয়ে কম সেগুলোর বীজ বপন করতে হবে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে এবং যে জাতগুলোর জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশী সেগুলো ১৫ কার্তিক থেকে বীজ বপন করা যাবে। এ সময় বীজ বপন করলে চারার উচ্চতা ভেদে ৩৫ - ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বোরো ধানের রোপণ ১৫ মাঘের মধ্যে শেষ করা উচিত।
এরপর রোপণ করলে জীবনকাল ও ফলন উভয়ই কমে যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় ১৫-৩০ কার্তিকের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। চার ফসল ভিত্তিক ফসল ধারায় বোরো ধানের চারা মাঘ মাসের ১ম সপ্তাহের মধ্যে রোপন করতে হলে পৌষ মাসের ১ম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
➤বীজের হারঃ
প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা ১ একর জমির জন্য ১০-১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। অঙ্কুরিত বীজ বেডের উপর সমানভাবে বুনে দিতে হবে । বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে । তাই বপনের সময় থেকে ৪/৫ দিন পর্যন্ত পাহারা দিয়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নালা ভর্তি করে পানি রাখতে হবে।
➤অতিরিক্ত ঠান্ডায় বীজতলার যত্নঃ
শীতের রাতে সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলা অতিরিক্ত ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া বীজতলা দিনে খোলা এবং রাতে সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে চারার বৃদ্ধি ভাল হয়। ফলে এ পদ্ধতিতে জন্মানো চারা রোপন করা সহজ হয় । চারার গুনগত মান ভাল হওয়ায় ফলনও তুলনামূলক ভাবে ভালো হয়।
➤জমি তৈরিঃ
দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি সমৃদ্ধ মধ্যম নিচু জমি এ ধান চাষের উপযোগী। মাটির প্রকারভেদে ৩-৫ বার চাষ ও মই দিতে হয়। শেষ চাষ ও মই দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমি যথেষ্ট সমতল হয় । শেষ চাষের সময় অনুমোদিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
➤সারের পরিমাণঃ
| সারের নাম | হেক্টর প্রতি | একর প্রতি |
|---|---|---|
| ইউরিয়া | ১২০-১৬০ | ৫০-৬৫ |
| টিএসপি | ১০০-১২০ | ৪০-৫০ |
| এমওপি | ৬০-৭০ | ২৫-৩০ |
| জিপসাম | ৩০-৪০ | ১২-১৬ |
| জিঙ্ক সালফেট (দস্তা) | ৫-৮ | ২-৩ |
