আউশ ধানের চাষ পদ্ধতি
আউশ ধানের চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
♦আমাদের দেশে সাধারণত আউশ,আমন ও বোরো এই ৩ মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়।আমাদের ধান চাষের মৌসুম ৩ টি, যথাঃ আউশ, আমন এবং বোরো৷ জমির হিসাব করতে গেলে ১ শতাংশে ৪৩৫ বর্গফুট, ৩৩ শতাংশে ১ বিঘা, ১০০ শতাংশে ১ একর, ২৪৭ শতাংশে ১ হেক্টর৷
আজ কথা বলবো আউশ ধানের পূর্ণাঙ্গ চাষ পদ্ধতি নিয়ে।
|
| আউশ ধানের চাষ পদ্ধতি |
⏺️সময়কাল
আউশ ধানের আবাদ সাধারণত বৃষ্টি নির্ভর,সেহেতু এ ধান উৎপাদনে সেচ খরচ সাশ্রয় হয়।এটি মূলত ১২০ দিনের ফসল।
♦আউশ ধানের বীজ কখন বপন করবেন?
আউশ ধানের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ চৈত্র(৩০ মার্চ-১৫ এপ্রিল)।
♦উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ-
➡️রোপা আউশের উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে BR-26,ব্রি ধান ৫৫,ব্রি ধান ৮২,ব্রি ধান ৪৮,ব্রি ধান ৮৫ উল্লেখযোগ্য।
➡️বোনা আউশের উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে BR 20,BR 21,BR-24, ব্রি ধান ৪২,ব্রি ধান ৪৩,ব্রি ধান ৮৩ উল্লেখযোগ্য।
▶️ সার ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগঃ-
এটি মূলত দুইভাবে করা হয়।
১.রোপা আমন ও ২.বোনা আমন
✳️রোপা আউশের ক্ষেত্রে ((শতাংশ প্রতি)
| সারের নাম | প্রয়োগ মাত্রা |
|---|---|
| ইউরিয়া | ৫৪৫গ্রাম-৬০০ গ্রাম |
| টিএসপি | ৩৬৫ গ্রাম(প্রায়) |
| এমওপি | ১৬০ গ্রাম |
| জিঙ্ক সালফেট - | ৪০ গ্রাম(প্রায়) |
| জিপসাম | ২৪৫ গ্রাম (প্রায়) |
☑️প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-
ইউরিয়া সার বাদ দিয়ে বাকি সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করে মাটির সাথে
মিশিয়ে দিতে হবে।
অন্যদিকে, ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
🔷প্রথম কিস্তিঃ-
(after seedling establishment) চারা রোপনের ১০ দিন পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ
করতে হয়।
🔷দ্বিতীয় কিস্তিঃ-
(at early tillering stage)
ধান গাছে কুশি বের হওয়া শুরু হলে অর্থাৎ প্রথম কিস্তিতে সার প্রয়োগের ১০
দিন পর দ্বিতীয় কিস্তিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
🔷তৃতীয় কিস্তিঃ-
(at 5-7 days before panicle initiation)
কাইচথোর আসার ৫-৭ দিন আগে অর্থাৎ দ্বিতীয় কিস্তিতে সার প্রয়োগের ১০ দিন পরে
তৃতীয় কিস্তিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
🚫❌ধান গাছে ইউরিয়া সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেনঃ-
★জমি শুকনো হওয়া যাবে না
★পানি বেশি হওয়া যাবে না
★গাছের পাতায় পানি জমে থাকা যাবে না
✳️বোনা আউশের ক্ষেত্রে(শতাংশ প্রতি)
#fixed_header_column{ position: relative; max-width: 100%; height: 300px; overflow: scroll; word-break:normal; } #fixed_header_column table { border-collapse: collapse; } #fixed_header_column td, #fixed_header_column th { padding: 5px; } #fixed_header_column thead th { position: sticky; top: 0px; background: #ff0000; color: #FFF; } #fixed_header_column thead th:first-child { left: 0px; z-index: 1; } #fixed_header_column tbody th { position: sticky; left: 0px; background: #1b90bb; border-right: 1px solid gray; color: #FFF; } #fixed_header_column tbody tr:nth-child(odd) { background-color: #dba363; }
| সারের নাম | প্রয়োগ মাত্রা |
|---|---|
| ইউরিয়া | ৫১০ গ্রাম |
| টিএসপি | ৩০০ গ্রাম(প্রায়) |
| এমওপি | ১৬০ গ্রাম |
| জিঙ্ক সালফেট - | ৪০ গ্রাম(প্রায়) |
| জিপসাম | ২৪৫ গ্রাম (প্রায়) |
শেষ চাষ দেয়ার সময় জমিতে ইউরিয়া সহ সকল সার প্রয়োগ করে দিবো।
⭕খেয়াল রাখতে হবেঃ-
রোপা আউশ এবং বোনা আউশ উভয় ক্ষেত্রেই,গোবর সার দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দিকেই
দিয়ে দিতে হবে।ফলে ডিকম্পোজ হতে যথেষ্ট সময় পাবে।
♦️চারা রোপণ:
লাইন বা সারি করে চারা রোপণ করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস
চলাচলের জন্য উত্তর-দক্ষিণ বরাবর সারি করে লাগালে ভালো। সাধারণত সারি থেকে
সারির দূরত্ব ৮-১০ ইঞ্চি ও গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ৬ ইঞ্চি রাখলে ভালো ফলন
পাওয়া যাবে।
♦️সেচ প্রয়োগ:
আউশ চাষাবাদ পুরোটাই বৃষ্টি নির্ভর। তবে কোনো পর্যায়ে সাময়িকভাবে খরা হলে
অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচের সংখ্যা একাধিক হতে পারে। তা না হলে ফলনে
মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
♦পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ:-
√√১.নাইট্রোজেনের অভাবে বয়স্ক পাতা হলুদ হয়ে যায়।পাতার শীর্ষ থেকে মধ্যশিরা
পর্যন্ত মৃত অঞ্চল সৃষ্টি হয়।গাছের বৃদ্ধিও কমে যায়।
√√২.ফসফরাসের অভাবে ধানের গুছির বৃদ্ধি বা টিলারিং কমে যায়।পাতায় বেগুনি রং
প্রকাশ পায়। বয়স্ক পাতায় লক্ষণ প্রথম দৃশ্যমান হয়।
√√৩.পটাশিয়ামের অভাবে পাতার শীর্ষ কিনারা বরাবর বাদামি অঞ্চল সৃষ্টি হয় ও
পরবর্তীতে পুরো পাতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ধানের ছড়াতেও অনিয়মিতভাবে কালচে
অংশ দেখা যায়।পাতা ছোট ও কান্ড সরু দেখায়।
√√৪.জিংকের অভাবে পাতায় বাদামি ছোপছোপ মরিচার মতো দাগ দেখা যায়। গাছের বৃদ্ধি
কমে যায়,অভাব প্রকট হলে গাছ মারাও যেতে পারে। এর অভাবে ধানের পরিপক্কতায়ও
বিলম্ব হয়।
√√৫.ক্যালসিয়ামের অভাবে কচি পাতা ও শীর্ষ হলদেটে হয়ে যায়,কুকড়েও যেতে পারে।
আর গাছের বৃদ্ধিও কমে যায়।
√√৬.বোরনের অভাবে পাতার শীর্ষ সাদাটে হয়ে যায়,গাছের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল মরে যায়।
গাছের উচ্চতা কম হয়।
√√৭.সালফারের অভাব ঘটলে নিচের দিকের বয়স্ক পাতাগুলো স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু
কচি পাতার রং হালকা সবুজ বা হলদেটে হয়ে যায়।
✳️♦ যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।
