আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার
আমের মুকুল ঝরেপড়ার কারণ ও দমন
বাংলাদেশ আমের মৌসুমে সকল আম গাছেই আমের মুকুল আসে। আর আম গাছে মুকুলের মধ্যে থাকে হাজার হাজার ফুল। তা থেকে জন্ম নেয় আমের গুটি। কিন্তু গাছে গুটি আসার পর বিভিন্ন কারণে সেসব আমের মুকুল ও গুটি ঝরে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আম চাষিরা। কারণ আমের মৌসুমে রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আম বাগানিরা। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকা-মাকড় দমনে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। তাই আমের মুকুল ঝরা রোধে কিছু করণীয় কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। আসুন জেনে নেই উপায়গুলো-
আসলে আমের ফুলগুলোকেই একত্রে আমের মুকুল বলা হয়। আমের মুকুলের মধ্যেই এক হাজার থেকে ছয় হাজার (১০০০-৬০০০) ফুল থাকে। পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল একসাথে থাকে এবং আমের মুকুল থেকেই আমের গুঁটি জন্মায়। জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র এক থেকে দু’টি গুটি থাকে।
প্রাকৃতিকভাবে আমের মুকুল ঝরে পড়া
বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, শিলা বৃষ্টির জন্য মুকুল ঝড়ে পরে। এছাড়া মাটিতে রসের/পানির অভাব হলেও আমের মুকুল ঝড়ে পরে।
মাটিতে রসের/পানির অভাবঃ-
ফাল্গুন-চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল) মাসে বৃষ্টিপাত কম হয়ে থাকে। এতে করে মাটিতে রসেরে বা পানির অভাব দেখা দিতে পার। যার ফলে আমের গুটি ঝরে পড়ে।
মাটিতে রসের/পানির অভাব হলে করণীয়ঃ-
আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই গাছের গোড়া বেঁধে দিয়ে জমির ধরন অনুযায়ী ১০-১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার পানি সেচ দিতে পারেন।
পোকার আক্রমণে আমের মুকুল ঝরে পড়া
আমের মুকুল ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হল হপার পোকার আক্রমণ। এই পোকা প্রায় ১৫০ টা ডিম পাড়তে পারে। এবং ৫-৭ দিনের মাথায় ডিম ফুটে নিম্ফ হয়। আর এগুলোই পরে আম গাছের পাতা, ফুল, ফলের রস শুষে খায়। ঠিক তখনই এক ধরণের রস পায়ুপথ দিয়ে নিঃসরণ করে যাকে "মধু রস বা হানি ডিউ" বলে। এই আঠালো একটা পদার্থের জন্যই আম গাছে শুটি মোল্ড নামে এক ধরণের ছত্রাক জন্মায়। ফলে সম্পূর্ণ গাছের পাতা, মুকুল কালো হয়ে যায়। তখন তাকে বলা হয় মহালাগা। এবং আমের গুটি মটরদানা/মার্বেল আকৃতির হলে হপার ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণের কারণে ফল ঝরে পড়তে পারে।
পোকার আক্রমণ দমনের উপায়ঃ-
পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক
রিপকর্ড, সাইপেরিন, রেলোথ্রিন, বাসাথ্রিন, সানমেরিন, কর্ট, বুস্টার, হেমাথ্রিন, রাইস, ম্যাজিক, মিমসাইপার, শেফা, সুরক্ষা ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ এমএল হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। অথবা
পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক
ইমিটাফ, ইমপেল, ইমু, টিডো, এডমায়ার ২০এসএল কনফিউডর ৭০ ডাব্লিউ ডিজি, জদিদ ২০০ এসএল প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ এমএল/গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
রোগের আক্রমণে আমের মুকুল ঝরে পড়া
আমের মুকুল ঝরে পড়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হল অ্যানথ্রাকনোজ রোগ। এটি কোলিটোট্রিকাম গোলেসপোরিওডিস (Colletotrichum gloeosporioides) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।যার ফলে আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে।
আবার পাউডারী মিলডিউ ওডিয়াম মেংগিফেরা (Oidium mangiferae) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগের কারণেই আক্রান্ত অংশে সাদা পাউডারে আমের মুকুল ঢেকে যায় ও আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে।
রোগের দমনের উপায়
রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক
গোল্ডাজিম, অটোস্টিন, নোইন, এমকোজিম, ফরাস্টিন, হেডাজিম, সিডাজিম, বেন্ডাজিম, আরবা, নোভা ৫০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা কাজিম ৮০ ডাব্লিউজি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। অথবা
রোগ দমনে প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক
টিল্ট, একোনাজল, প্রোটাফ, প্রাউড, প্রোটেন্ট, সাদিদ ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ এমএল হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। অথবা
রোগ দমনে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক
ইন্ডোফিল এম-৪৫, নেমিস্পোর, এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউ পি, ডায়থেম এম-৪৫, ক্যাম্পনিয়ন, ম্যানসার, কারকোজেব প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
পাওডারী মিলডিও রোগ দমনে
পাওডারী মিলডিও রোগ দমনের জন্য ফুল ফোটা বা ফুল আসার পূর্বে অথবা আগেই একবার স্প্রে করতে হবে। এবং ফুল ধরার পর বা গুটি আসার পর একবার সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
সারের অভাবে আমের মুকুল ঝড়াঃ-
সারের অভাব হলে অনেক সময় আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে। তাই আম গাছের চাহিদা পূরনের জন্য সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।
আম গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ
বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে বছরে দুই বার গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বোরন সারের অভাবে আম ঝরে ও ফেটে যেতে পারে তাই প্রতি লিটার পানিতে ১.৫-২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
যোগাযোগ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24 অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।
