গরমে হিট স্ট্রোক কেন হয়? কিভাবে মোকাবিলা করবেন?

হিট স্ট্রোক কেন হয়

স্বাভাবিক দেহের তাপমাত্রা ৯৮ ফারেনহাইট। যদি এটি ১০৪--১০৫ ফারেনহাইট ক্রস করে তখন হিট স্ট্রোক হতে পারে। ডিহাইড্রেশন হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ। এছাড়াও গরমে শরীর ক্লান্ত লাগার প্রধান কারণই হল হিট স্ট্রোক। তারমধ্যে পানিশূন্যতা হিট স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। বদ্ধ ঘরের মধ্যে বসেই সারাদিন কাজ করলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশিই থাকে। 
এসব কিছুই হয় অতিরিক্ত ঘামের জন্য অর্থাৎ শরীর থেকে লবণ পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ ঘাম হলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে, যার ফলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে শুষ্ক আবহাওয়াই হিট স্ট্রোকের কারণ। তাই শুরুতে সতর্ক না হলে হিট স্ট্রোক সমস্যা গুরুতর হতে পারে। গরমে নানা অসুখ-বিসুখ হয়ে থাকে । তার মধ্যে একটি হল হিট স্ট্রোক। এতে আক্রান্ত হতে পারে বড়-ছোট নানান বয়সের মানুষ। প্রচুর পানি পান করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। মাঝেমধ্যে লবণ পানি বা স্যালাইন খেলে আরো ভালো। অতএব আমরা আজ সহজেই হিট স্ট্রোক সম্পর্কে নিছে বিস্তারিত জানতে পারবো। 
গরমে হিট স্ট্রোক কেন হয়?প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলেই হিট স্ট্রোক বলে
হিট স্ট্রোক


হিট স্ট্রোক কাকে বলে?

প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় যখন শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলেই তাকে হিট স্ট্রোক বলে। সাধারণত আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে জুন/জুলাই মাস পর্যন্তই মানুষের মধ্যে হিট স্ট্রোক আকস্মিকভাবে ঘটার সম্ভাবনা থেকে থাকে।



হিট স্ট্রোক কী?

হিট স্ট্রোক হচ্ছে গরমের সময়ে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হওয়া জটিলতা বা মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোন কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান করলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।



হিট স্ট্রোক এর কারণ

♣ পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা কারণে।

♣ শরীরে পানিস্বল্পতা বা ইলেক্ট্রোলাই'টস (Electrolytes imbalance)- এর অভাবেই।

♣ কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স (diuretics), বিটা ব্লকার'স (beta blockers), অ্যালকোহল (alcohol) এর কারণে। 

♣ যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করে থাকে , তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক ইত্যাদি।



হিট স্ট্রোকের লক্ষণ কী?

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতেই ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পেয়ে থাকে । এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা যায় । এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো হলো—
♠ শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রিº ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
♠ ঘাম বন্ধ হয়ে যায় বা পর্যাপ্ত ঘাম না হওয়া।
♠ ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
♠  শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়।
♠ নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
♠ রক্তচাপ কমে যায়।
♠ খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা,অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।
♠ বমি ও বমি বমি ভাব, হাঁটতে অসুবিধা।
♠ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
♠ রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।


হিট স্ট্রোক হলে করনীয়

যদি হিট স্ট্রোক হয়ে যায়, তবে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া হিট স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা খুবই জরুরী। এজন্য সবাই এ বিষয়ে জানা দরকার। কেউ অতিরিক্ত গরমে হঠাৎ করে পড়ে গেলে, প্রথমেই একটি গাড়ি কল করুন। অসুস্থ ব্যক্তি কে দ্রুত কোন স্থানে নিয়ে যান। অসুস্থ ব্যক্তির শরীর ঠান্ডা করতে নিচের পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করুন-

♥ কাপড় পানিতে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।

♥ ফ্যান ছাড়ুন বা হাত পাখা দিয়ে নিয়মিত বাতাস করুন।

♥ ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানি থাকলে সেগুলো রোগীর ঘাড়, বগল ইত্যাদি স্থানে ভিজিয়ে দিবেন।

♥ খুব ঠান্ডা পানিতে রোগীকে গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। সম্ভব না হলে টিউবলের পানি দিতে পারেন।

♥ বয়স্ক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই শরীর ঠান্ডা করার জন্য বরফ ব্যবহার করা যাবেনা।

♥ হিট স্ট্রোক হলে দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান। যেকোনো ইমারজেন্সি অবস্থায়, কোন প্রাইভেট চেম্বারে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যাওয়াটাই উচিত।



হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী?

গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। এগুলো হলো—

♦ হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে আরও ভালো।

♦ যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।

♦ বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ অথবা ছাতা ব্যবহার করুন।

♦ বাইরে যাঁরাই কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা সবাই মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।

♦  প্রচুর পরিমানে পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদি পান করতে হবে। তবে পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।

♦ তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি অবশ্যই যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।

♦ রোদের মধ্যে যথাসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতে হয়, তবে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়


১. পর্যাপ্ত পরিমাণ পাসনি পান করা

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রতিদিনই অন্তত দুই লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া জুস, ডাবের পানি, লেবু পানি ইত্যাদি পানীয় জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। এসব খাবার শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। এতে অবসন্নভাব, বমি, ক্লান্তি প্রতিরোধ হয়।

২.  সহজপাচ্য খাবার খান

গরমে সবসময় খাদ্যতালিকায় সহজপাচ্য খাবার রাখতে পারেন। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের তাপ বাড়িয়ে থাকে। তাই এমন খাবার খান যেগুলো শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে থাকে। এ সময় খাদ্য তালিকায় সবজি ও মৌসুমি ফল বেশি করে রাখতে পারেন।

৩. পকেটের মধ্যে পেঁয়াজ রাখুন

কথাটি শুনে হাসি পাচ্ছে? পাগল মনে হচ্ছে।  আসলেই মজার বিষয় হলো, পকেটের মধ্যে পেঁয়াজ রাখলে এটি শরীরের তাপ শোষণ করতে সাহায্য করে থাকে এবং শরীরের তাপামাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি আপনাকে দুর্বিষহ গরম থেকেও কিছুটা রক্ষা করে।

৪. পেঁয়াজ খান

গরমের সঙ্গে লড়াই করতে পেঁয়াজ খুবই উপকারী খাবার। পেঁয়াজ, বিশেষ করে লাল পেঁয়াজের মধ্যে কুয়ারসেটিন নামক উপাদান রয়েছে। এটি আমাদের শরীরকে প্রশমিত করে এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।

৫. হালকা রঙের পোশাক পরুন

অতিরিক্ত গরমের সময় কালো বা খুব গাঢ় রঙের পোশাক না পরাই সবচেয়ে ভালো।  কারণ, গাঢ় রঙের পোশাক তাপ বেশি শোষণ করে থাকে, আর হালকা রঙের পোশাক তাপ প্রতিফল করতে সাহায্য করে। তাই এ সময়  হালকা রঙের, সুতি কাপড়ের পোশাকই পরুন। এতে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে।


যোগাযোগ 

রান্নাঘর, হেলথ টিপস,লাইফস্টাইল,কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধানে সঠিক পরামর্শ দিতে সবার আগে আপনার পাশে সবসময রয়েছে ekrishi24.
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url