ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ ও তার প্রতিকার

ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ পরিচিতি

ekrishi24.com: ধানের পাতার লালচে রেখা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ।  এই ব্যাকটেরিয়া ধান গাছে ক্ষত বা পাতার কোষের স্বাভাবিক ছিদ্র পথে প্রবেশ করে এবং শিরার মধ্যবর্তী স্থানে সরু রেখার জন্ম দেয়। আস্তে আস্তে রেখা বড় হয়ে লালচে রং ধারণ করে ধান গাছের মারাত্নক ক্ষতি করে থাকে। চলুন ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ ও তার প্রতিকার-ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে পাতায় আক্রমণ করে থাকে। দাগগুলো বড় হয়ে লালচে রং ধারণ করে মরে যায়
ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ

রোগের নাম ও কারণ:

ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ Bacterial Leaf Streak (BLS) of Rice (Xanthomonas campestris pv. oryzaicola) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।


কখন কোথায় আক্রমণ করেঃ
ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে পাতায় আক্রমণ করে থাকে।


রোগ পরিচিতির লক্ষণঃ

★ এ রোগ সাধারণত পত্র ফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

★ প্রথমে শিরা সমূহের মধ্যবর্তী স্থানে সরু ও হালকা দাগ পড়ে। ক্রমান্বয়ে দাগগুলো বড় হয়ে বাদামী রং ধারণ করে।

★ পরবর্তীতে আক্রান্ত ধানের পাতা পুরোটাই বাদামী রঙের হয়ে যায়।

★ সূর্যের দিকে ধরলে এ দাগের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে এবং পরিস্কার দেখা যায়।


রোগের ক্ষতির ধরণ:

আস্তে আস্তেই ধানের পাতার দাগগুলো বড় হয়ে লালচে রং ধারণ করে এবং পাতার পার্শ্ববর্তী বৃহৎ শিরার দিকেই ছড়াতে থাকে। আক্রমণ প্রবণ জাতে ধানের পাতা পুরোটাই লালচে রঙের হয়ে মরে যেতে পারে।

রোগ বিস্তারের অনুকুল অবস্থায় সারা মাঠ হলদে কমলা রঙের হয়ে যায়। এই ব্যাকটেরিয়া গাছে ক্ষত বা পাতার কোষের স্বাভাবিক ছিদ্র পথে প্রবেশ করে। পাতা পোড়া রোগের চেয়ে বেশি হলদে গুটিকা পাতার উপর সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি এবং বাতাস এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে থাকে।


সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

১) জমিতে আগাছা, শিকড়, খড়কুটা সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।

২) ফসল কাটার পর নাড়া শুকিয়ে জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।

২) আক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।

৩) ৫৪  সেঃ তাপমাত্রায় পানিতে ১৫ মিনিট ভিডিােয় রাখলে বীজ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়।

৪) এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন গুলে তাতে বীজ এক রাত রেখে বীজ শোধন করা।‘অথবা’ ১০ লিটার পানিতে Strepocycline ( 1G) এবং কার্বেন্ডাজিম ৫০ ডব্লিউ পি এক সাথে মিশিয়ে ৮-১০ কেজি বীজ ১৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে বীজ শোধন করা।

৫) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৫০ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড অথবা ২০ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

৬) ৫০-১০০ গ্রাম পটাশ সার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

৭) পোকা দ্বারা পাতায় যেন ক্ষতি হতে না পারে সেজন্য জমিতে পোকা দেখা মাত্র কীটনাশক বা অন্য উপায়ে মেরে ফেলা।

এরোগ দেখা দিলে ক্ষেতে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো হলে ভাল ফল পাওয়া যায়।


ভেষজ পদ্ধতিতে দমনঃ

রসুন দ্বারা বীজ শোধনঃ এক কেজি পরিমাণ রসুন পিষে রস বের করে ১০ কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করা।


পূর্ব-প্রস্তুতি :

রোগ প্রতিরোধশীল জাত যেমন বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর৯(সুফলা), বিআর১০(প্রগতি),বিআর১৪ (গাজী), বিআর১৬ (শাহীবালাম), বিআর২০ (নিজামী), বিআর২১(নিয়ামত), বিআর২৪ (রহম), ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩০, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান৪০,  ব্রিধান৪১, ব্রিধান৪২ ইত্যাদি চাষ করা।


করণীয় 

১।রোগ সহনশীল জাত চাষ করা যেতে পারে।
২। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
৩। লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
৪। সুষম পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করা।
৫. ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)।



রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন


সুপারিশকৃত বালাইনাশক
১) বালাইনাশকের নামঃ ক্রোজিন এজি ১০ এসপি,
গ্রুপঃ স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট (৯%)+ টেট্রাসাইক্লিন।
প্রয়োগ মাত্রাঃ ০.৫ গ্রাম/প্রতি লিটার পানি। 
কোম্পানীঃ ম্যাকডোনাল্ড ক্রপ কেয়ার লিমিটেড। 


২) বালাইনাশকের নামঃ ব্যাকট্রোবান-২০ ডব্লিউ পি। 
গ্রুপঃ মিসমার্থিওজল। 
প্রয়োগ মাত্রাঃ ৪০ গ্রাম ঔষধ ১৬ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা।
কোম্পানীঃ হেকেম বাংলাদেশ লিমিটেড।

৩) বালাইনাশকের নামঃ টিমসেন। 
গ্রুপঃ কোয়ার্ডার্টারি এমোনিয়াম ১। 
প্রয়োগ মাত্রাঃ ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানি। 
কোম্পানীঃ ইয়ন এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। 

৪) বালাইনাশকের নামঃ ব্যাকট্রল ২০ ডব্লিউপি। 
গ্রুপঃ মিসমার্থিওজল। 
প্রয়োগ মাত্রাঃ ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানি। 
কোম্পানীঃ সুরভি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। 


৫) বালাইনাশকের নামঃ কিমিয়া ২১.৫ ডব্লিউ পি। 
গ্রুপ: বিসমার্থিজল + কাসুগামাইসিন। 
প্রয়োগ মাত্রা: প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে স্প্রে করা।
কোম্পানীঃ মিমপেক্স এ্যগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড।



যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.com অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url