কাঁকরোল এর উপকারিতার যত গুণ
কাঁকরোলের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
কাঁকরোল একটি অতি পরিচিত সবজি। দেশের প্রায় সর্বত্রই এই সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। কাঁকরোলের গায়ে ছোট ছোট অনেকগুলো কাঁটা থাকে। গায়ে কাটা থাকার কারণে অনেকে একে ছোট কাঁঠাল বলা হয়। থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে প্রচুর পরিমাণে কাঁকরোল পাওয়া যায়।
যে কোনো মৌসুমী ফল বা সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তার মধ্যে কাঁকরোল একটি। কাঁকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিজেন এবং ভিটামিন এ, সি। এই কাঁকরোল আমাদের দৈনিক পুষ্টি ও দেহের বিভিন্ন রোগের পথ্যের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
এছাড়া এতে রয়েছে দেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। এসব সবজি খেলে মানবদেহের দৈনিক পুষ্টি ও বিভিন্ন রোগের পথ্যের চাহিদা পূরণ হয়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক মৌসুমী সবজি কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-
|
| কাঁকরোলের উপকারিতা |
পুষ্টিগুনঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে ৭৯.৪ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য
পুষ্টিগুন ও রয়েছে যেমন, খনিজ পদার্থ-০.৯ গ্রাম,খাদ্যশক্তি-৮০
কিলোক্যালরি, আমিষ-২.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৩৬
মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন-৪১০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-২-০.০৬ মিলিগ্রাম ও
শর্করা-১৭.৪ গ্রাম ইত্যাদি।
কাঁকরোলের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
কাঁকরোল এমন একটি সবজি যার মধ্যে টমেটোর চেয়েও প্রায় ৭০ গুণ বেশি পরিমাণে লাইকোপিন পাওয়া যায়। এতে কমলার চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশী পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে প্রয়োজনীয় বিটা ক্যারোটিন ও জিয়াজেন্থিন।
হার্ট এ্যাটাকের সুরক্ষা
কাঁকরোলে লাইকোপিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে টমেটো থেকে শতকরা ৭০ ভাগ বেশি। লাইকোপিন প্রস্টেট ক্যান্সার রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় পাওয়া গেছে যাদের শরীরে লাইকোপিনেরে মাত্রা বেশি, তাদের চেয়ে যাদের শরীরে এর মাত্রা কম তাদের শতকরা ৫০ ভাগ বেশি হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে কাঁকরোল আপনার হার্টেরও উপকার করবে নিশ্চয়ই।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
তাজা কাঁকরোলে ভিটামিন ‘সি’ অনেক বেশি থাকে যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।দেহের ফ্রি র্যাডিকেলের সংখ্যা কমায় এবং যা মানবদেহের সবথেকে মারাত্মক রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে । এর মধ্যে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিকে ধীরগতির করতে সক্ষম। এসব গুণের কারণেই মূলত কাঁকরোলকে “স্বর্গীয় ফল” হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বা যাদের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রয়েছে তাদের নিশ্চিন্তে কাঁকরোল খেতে পারেন। এটি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ
এটি ইন্স্যুলিন নিঃসরণ ও সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ক্যালরির ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এটি কার্যকরী।
ত্বককে সুরক্ষাঃ
কাঁকরোলে আছে ভুট্টার চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বেশি জিযানথেন এবং গাজরের চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ বেশি বিটা ক্যারোটিন, আছে ভিটামিন ই। এগুলো আপনার ত্বককে দূষণ থেকে রক্ষা করে। আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না। কাঁকরোলের জুস ত্বকের জন্য উপকারি।এছাড়া কাঁকরোলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সাইড যা বাইরের রোদ ধোঁয়া, ধুলো এবং দূষণের হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।
কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ প্রতিরোধ করেঃ
যেহেতু কাঁকরোলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাই এটি কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সক্রিয় জীবনযাপনের পাশাপাশি কাঁকরোল খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোঃ
কাঁকরোলে আছে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন। ফলে কলোস্টেরল লেভেল থাকে নিয়ন্ত্রণে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে কাঁকরোলে বিদ্যমান উপাদান।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়ঃ
কাঁকরোলে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভিটামিন, বিটাক্যারোটিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করার পাশাপাশি চোখের ছানি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
মেদ ও ওজন কমায়ঃ
কমলার চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে কাঁকরোলে। ভিটামিন সি শরীরের অতিরিক্ত মেদ পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে।আর রক্তে ভিটামিন সি'র পরিমাণ কম থাকলে ফ্যাট বার্নিং কম হয়।ফলে ওজন কমে না।যাদের রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন সি আছে,তাদের ফ্যাট বার্নিং হয় শতকরা ২৫ ভাগ।ফলে তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
১০০ গ্রাম কাঁকরোলে মাত্র ১৭ ক্যালরি থাকে। তাই ওজন কমাতে অবশ্যই কাঁকরোল খেতে পারেন।
বিষণ্ণতা প্রতিহত করেঃ
কাঁকরোলে সেলেনিয়াম, মিনারেল এবং ভিটামিন থাকে, যা নার্ভাস সিস্টেমের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। তাই বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে কাঁকরোল।
তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করেঃ
কোষের কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করে এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করতে সাহায্য করে। কোলাজেনের গঠনকে পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে বয়সের ছাপ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে কাঁকরোল।
কাশি এবং অ্যালার্জিরঃ
খুশখুশে কাশি এবং অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে কাঁকরোল খেলে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ
হজম শক্তিও বাড়ায় কাঁকরোল। এছাড়া এটি একটি লো ক্যালারির সবজি এবং এতে ফাইবার থাকায় দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করবে এই সবজি।
এতে হাইফাইবার এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হজমের গোলমাল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো করতে সাহায্য করে।
অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করেঃ
কাঁকরোলে প্রচুর আয়রন থাকার পাশাপাশি ভিটামিন সি ও ফলিক এসিড ও থাকে। এ কারণে নিয়মিত এটি খেলে অ্যানেমিয়ার প্রতিহত করা সম্ভব হয়।
