আমন/রোপা আমন ধানের আধুনিক জাত ও প্রকারভেদ

 আমন/রোপা আমন ধানের আধুনিক জাত ও প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা 


ধান আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য শস্য। আমাদের দেশে বছরব্যাপী পর্যায়ক্রমে বােরাে, আউশ এবং আমন মৌসুমে ধান চাষ হয়ে থাকে।তাই উৎপাদনে আমন ধানের জাত ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানা দরকার। 


দেশের মােট ধানী জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে রােপা আমন চাষ করা হয় এবং মােট উৎপাদনের অর্ধেক পরিমাণ ধান আসে রােপা আমন আবাদ থেকে। তাই রােপা আমন ধানের ক্ষেত্রে একটু বিশেষ খেয়াল ও যত্ন নেওয়া উচিত।



অন্য জমিতে চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা ক্ষেতে রোপণ করে ধান উৎপন্ন হয় বলে একে রোপা আমন বলে। এবং জমিতে  সরাসরি ছিটিয়ে বোনা হয় বলে একে বোনা আমন ধান বলে।
আমন/রোপা আমন ধানের আধুনিক জাত ও প্রকারভেদ

♦📯♦📯আমন ধানের প্রকারভেদঃ

আমন ধান মূলত দুই প্রকার 

১) রোপা আমন ও

২)বোনা আমন।



♦রোপা আমন ধান

অন্য জমিতে চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা ক্ষেতে রোপণ করে ধান উৎপন্ন হয় বলে একে রোপা আমন বলে। 




রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW


♦বোনা আমন ধান

জমিতে  সরাসরি ছিটিয়ে বোনা হয় বলে একে বোনা আমন ধান বলে।



আবার একে 

ছড়া আমন, বাওয়া আমন বা গভীর পানির আমনও বলা হয়। 



♦রোপা আমন ধানের বীজ কখন বপন করবেন?

রোপা আমন আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পৌষ (এলাকাভেদে) মাসে ধান কাটা হয়।



♦বোনা আমন ধানের বীজ কখন বপন করবেন?

চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বোনা আমনের বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়।



♦আমন ধানের জাত নির্বাচন

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমন মৌসুম ও এর পরিবেশ উপযোগী ৪১টি (৩৯টি ইনব্রিড ও ২টি হাইব্রিড) উফশী ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানা রকম কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে। অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য আমন জাতগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।




রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW




♦অনুকূল  পরিবেশে চাষযোগ্য আমন জাত সমূহ



➡️ বিআর-৪, বিআর-৫, বিআর-১০, বিআর-১১, ব্রি ধান-৩০, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৯, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮০, ব্রি ধান-৮৭।




♦প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য আমন জাত সমূহ


➡️ খরাপ্রবণ এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলো হলো- ব্রি ধান-৫৬, ব্রি ধান-৫৭ ও ব্রি ধান-৬৬, ব্রি ধান-৭১ 


➡️ বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলো হলো- ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৭৯। এছাড়া বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান-৪৬ জাতগুলোর নাবি গুণ থাকার জন্য এদের বীজ ২০-৩০ শ্রাবণে বপন করে ৩০-৪০ দিনের চারা সর্বশেষ ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত বন্যা প্রবণ এলাকায় রোপণ করা যায়।


➡️ লবণাক্ত এলাকায় বিআর২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮।


➡️ জোয়ার-ভাটা প্রবণ অলবণাক্ত এলাকার উপযোগী জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৬,ব্রি ধান৭৭


➡️ জলাবদ্ধ এলাকার জন্য উপযোগী জাত- বিআর১০, বিআর২৩, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৮


➡️ বরেন্দ্র এলাকার জন্য জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, ও ব্রি ধান৮০। এছাড়া সুগন্ধি ব্রি ধান৩৪ সহ সমতল বরেন্দ্র অঞ্চলে অনুকূল পরিবেশের  জন্য সুপারিশকৃত সব জাতই চাষ করা সম্ভব।


রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW


➡️ পাহাড়ি এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, এবং ব্রি ধান৮০।



✳️ প্রিমিয়াম কোয়ালিটি জাত : 

দিনাজপুর, নওগাঁসহ যেসব এলাকায় সরু বা সুগন্ধি ধানের চাষ হয় সেখানে বিআর-৫, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৭০, ব্রি ধান-৭৫ ও ব্রি ধান-৮০ চাষ করা যায়।


✳️ ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত : 

আমন মৌসুমের জন্য ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতগুলো হলো ব্রি হাইব্রিড ধান-৪ ও ৬। এ জাতগুলো বন্যামুক্ত এলাকায় রোপা আমনে অনুকূল পরিবেশে চাষযোগ্য। এ জাতগুলোর চাল মাঝারি চিকন, স্বচ্ছ ও সাদা এবং লম্বা, ভাত ঝরঝরে হওয়ায় কৃষকের কাছে পছন্দনীয়।


✳️ নতুন উদ্ভাবিত আমনের জাত ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৮০ এবং ব্রি ধান-৮৭ জাতগুলো চাষ করে প্রতিনিয়ত উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।




রোপা আমন ধানের সম্পূরক সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে CLICK NOW


⏺️সময়কাল


 জীবনকাল অনুসারে জাতগুলোকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়।

১) দীর্ঘমেয়াদি, 

২)মধ্যম মেয়াদি ও 

৩)স্বল্প মেয়াদি জাত। 



➡️ দীর্ঘমেয়াদি জাত

দীর্ঘমেয়াদি জাতের (জীবনকাল ১৩৫ দিনের বেশি), যেমন- বিআর-১০, বিআর-১১, ব্রি ধান-৩০, ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৪, ব্রি ধান-৫১।



➡️ মধ্যম মেয়াদি জাত

মধ্যম মেয়াদি জাতের (জীবনকাল ১২০-১৩৫ দিন), যেমন- বিআর-২৫, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৭০, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৯, ব্রি ধান-৮০, ব্রি ধান-৮৭।



➡️ স্বল্প মেয়াদি জাত

স্বল্পমেয়াদি জাতের (জীবনকাল ১২০ দিনের কম), রবি ফসল এলাকায় স্বল্পমেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৯, ব্রি ধান-৫৬, ব্রি ধান-৫৭, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৬৬, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫ চাষ করে সহজেই ধান কাটার পর রবি ফসল করা যাবে।


যোগাযোগঃ

কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ করুন।

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Faisal
    Faisal ২০ মে, ২০২৩ এ ১১:৪৬ PM

    এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

  • Faisal
    Faisal ২০ মে, ২০২৩ এ ১১:৫৪ PM

    কক্সবাজার থেকে বলতেছি।বর্ষা মৌসুমে চিকন ও লম্বা ধানের জাত কোনটি...?

Add Comment
comment url