মরিচের ঢলে পড়া/গোড়া পঁচা ( Wilting of Chilli) রোগ দমন ও তার পরিচিতি | মরিচের রোগ
মরিচের ঢলে পড়া/গোড়া পঁচা ( Wilting of Chilli) রোগ দমন ও তার পরিচিতি
বাড়ন্ত মরিচ গাছে ব্যাকটেরিয়া ও ফিউজারিয়াম জাতীয় ছত্রাকজনিত ঢলেপড়া রোগে
আক্রান্ত হলে নিছের এমন লক্ষণ দেখা যায়। রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরুপ-
|
|
| মরিচের ঢলে পড়া/গোড়া পঁচা ( Wilting of Chilli) |
রোগের বিস্তারঃ মাটি ও পানির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়ে থাকে।
রোগের কারণঃ ব্যাকটেরিয়া ও ফিউজারিয়াম জাতীয় ছত্রাক।
১) ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ
ব্যাকটেরিয়া রোগের লক্ষণঃ
• সাধারণত নার্সারিতেই রোগটি হয়ে থাকে। বীজ বপনের পর মাটিতেই বীজ পচে
যেতে পারে বা বীজ অংকুরোদগমের পরেই কচি চারার গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে। এবং
কুঁচকে গিয়ে চারা ঢলে পড়ে ও মারা যায়। নার্সারির গাছ আক্রান্ত বেশি হলে ৩-৫
দিনের মধ্যে মরে যেতে পারে।
প্রাথমিক অবস্থায় বাড়ন্ত বা ফুল ও ফুল ধরার সময় মরিচ গাছের নিচের পাতাগুলিকে
ঝুলে বা ঢলে পড়তে দেখা যায়। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই গাছের গোড়া ও
শিকর যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়ে যায়। ফলে গাছের কচি ডগাগুলি মরে বাদামী রঙ ধারণ করে
এবং গাছ খুব দ্রুত ঢলে পড়ে।
২) ফিউজারিয়াম ( Fusarium ) জনিত ঢলে পড়া রোগ
ফিউজারিয়াম রোগের লক্ষণঃ
Fusarium নামক ছত্রাকের আক্রমণে ও এই রোগ হয়। যে সমস্ত জমিতে পানি নিষ্কাশনের
ব্যবস্থা নেই সে সকল জমিতে এই রোগ বেশি হয়। মাটির নিচ দিয়ে যেস্থান হতে
পার্শ্বশিকড় গজায় তাঁর মধ্যেদিয়ে কাণ্ডে ছত্রাকের অনুপ্রবেশ ঘটে। এই ছত্রাক
শিকড়কেও আক্রমণ করে যার ফলে শিকড় নরম ও ভেজা মনে হয়। স্যাঁতসেঁতে মাটিতে
কাণ্ডের গোড়া সাদা অথবা নীলাভ ছত্রাক স্পোর দ্বারা আবৃত হয় যার ফলে গাছের
অগ্রভাগের পাতা হলুদ হয়ে যায়, পরে সব গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আবার মরিচ গাছ
লম্বালম্বিভাবে কাটলে বা ফাটালে ভাসকুলার বান্ডল বিবর্ণ দেখা যায়।
রোগের অনুকূল অবস্থায় ১০-১৫ দিনের মধ্যে গাছ সম্পূর্ণরূপে ঢলে পড়ে, কিন্তু
প্রতিকূল অবস্থায় ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে।
মরিচের বীজ শোধনঃ
• বীজ শোধন করা (প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/ নোইন বা ২.৫ ভিটাভেক্স
২০০)।
• চারা শোধন করা (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/ নোইন বা ২.৫
ভিটাভেক্স ২০০)।
• ব্যাকটেরিয়ার কারণে চারা শোধন করা। ( ১ গ্রাম ষ্টেপ্টোমাইসিন সালফেট ১০ লিটার
পানিতে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা)।
ট্রাইকোডারমা ভিড়িডি (৩-৪ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করা।
মরিচের রোগের প্রতিকারঃ
১) বীজ শোধন করতে হবে।
২) উঁচু বীজতলা তৈরি করতে হবে।
৩) উঁচু জমিতে মরিচ চাষ করতে হবে।
৪) জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৫) উপযুক্ত পরিমাণে পটাস সার জমিতে প্রয়োগ করলে রোগের পরিমাণ অনেক কম হয়।
৬) নীরোগ বীজতলার চারা লাগাতে হবে।
রোগাক্রান্ত গাছ তুলে এবং ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৭) শিকড় গিঁট (কৃমি বা নেমাটোড) দমন করতে হবে কারণ এটি ছত্রাকের অনুপ্রবেশে
সাহায্য করে।
৮) গাছকে সতেজ রাখার জন্য বিকাল ৪ টার পর পরিমিত পরিমান জমিতে সেচ দিতে হবে।
৯) শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে যেমন আলু, বেগুন ও টমেটো জাতীয় সবজি এবং
মরিচ ছাড়া অন্য সবজি বা মসলা চাষ করার সুপারিশ করা এবংসবুজ সার ব্যবহার করতে
হবে।
১০) বাড়ন্ত মরিচ গাছের গোড়া ৪৫-৬০ সেঃমিঃ উঁচু করে মাটি তুলে দিতে হবে এবং
মরিচ গাছে ইংরেজি V আকৃতির নিচে পাতা কিংবা পার্শ্বকুড়ি কেটে পরিস্কার রাখতে
হবে ।
১১) ব্যভিস্টিন ৫০ ডব্লিউ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে আক্রান্ত
বাড়ন্ত মরিচ গাছের গোড়ার চারিপাশের মাটিতে১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বারস্প্রে করতে
হবে।
১২) ট্রাইকস্ট ১% ডব্লিউ পি অথবা ট্রাইকোডার্মা পাউডার প্রতি লিটার পানিতে
৪-৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শেষ বিকেলে গাছের গোড়ায় ভালো ভাবে স্প্রে অথবা ঢেলে
দিতে হবে।
১৩) জৈব ছত্রাকনাশক যেমন মোনেক্স ০.৫ ডব্লিউ পি প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম
হারে মিশিয়ে শেষ বিকেলে গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে স্প্রে দিতে হবে অথবা গাছের গোড়ায়
ঢেলে দিতে হবে ৮ দিন পর পর ২-৩ বার।অথবা
১৪) বিসমাথিয়াজল গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া নাশক যেমন, ব্যাকটাফ / অটোব্যাক/ রাদি /
ব্যাকট্রবান/ ব্যাকট্রল / বিসমাজল ২০ ডব্লিউ পি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম
হারে মিশিয়ে শেষ বিকেলে গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে স্প্রে দিতে হবে ১২ দিন পর পর ২
বার।
⚠️ সতর্কতাঃ
* মুখে গামছা বেঁধে কিংবা মাস্ক পরে স্প্রে করুন।
* ছত্রাকনাশকের গন্ধ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।
* স্প্রের ১৫ দিনের ভিতরে মরিচ সংগ্রহ করবেন না।
যোগাযোগঃ
কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও ফসলের রােগবালাই এবং পােকামাকড় দমনে
সঠিক পরামর্শ দিতে আপনার পাশে রয়েছে ekrishi24.অথবা নিকটস্থ “কৃষক তথ্য ও
পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক)” অথবা “উপ সহকারী কৃষি অফিসার” এর সাথে যোগাযোগ
করুন।